ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাক্তন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োকে জাপান সরকারের উপহার হিসেবে দেওয়া প্রায় ছয় হাজার ডলার মূল্যের একটি হুইস্কির বোতলের খোঁজ মিলছে না৷ সেটি কোথায় গেল, তা অনুসন্ধান করছে আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রক৷
দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১৯ সালের জুনে রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান গিয়েছিলেন মাইক পম্পেও৷ সে ইসময় দেশটির সরকার তাঁকে একটি হুইস্কির বোতল উপহার দেয়, যার মূল্য ছিল পাঁচ হাজার ৮০০ ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪.৪ লাখ টাকা৷ মেয়াদকালে বিদেশ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের পাওয়া অন্য উপহারের হদিশ থাকলেও বিদেশ মন্ত্রকে এটির সন্ধান মিলছে না৷ এই বিষয়ে মাইক পম্পেওর নিজেরও কোন ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী উইলিয়াম ব্রুক৷
গত ২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিদেশ মন্ত্রকের অধীনে চিফ অব প্রোটোকলের একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই উপহারের হদিশ না পাওয়ার তথ্য জানানো হয়৷ সেখানে বলা হয়েছে, বিদেশ মন্ত্রকের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং এ নিয়ে তদন্ত চলছে৷ আমেরিকার সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ নিয়ম অনুযায়ী, মার্কিন কর্মকর্তারা ৩৯০ ডলারের কম মূল্যের উপহার নিজেদের কাছে রাখতে পারেন৷ এর বেশি মূল্যের উপহার রাখতে চাইলে তার মূল্য পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ কিন্তু পম্পেয়োর ক্ষেত্রে সেটি হয়নি৷
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে পম্পেওর আইনজীবী উইলিয়াম ব্রুক জানিয়েছেন, পম্পেয়োর হুইস্কির বোতলটি গ্রহণের বিষয়ে কিছু মনে করতে পারছেন না এবং সেটি কোথায় গেছে সেই বিষয়েও তার কোন ধারণা নেই৷ তবে জানতে চাইলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি৷ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পম্পেও নিজে উপহারটি গ্রহণ করেছিলেন কিনা, সেটি পরিষ্কার নয়৷ কারণ জাপান সরকার যখন বিদেশ মন্ত্রকের এই উপহারটি হস্তান্তর করে তখন তিনি সৌদি আরব সফরে ছিলেন৷
উপহার: কার্পেট থেকে রোল্যাক্স ঘড়ি
পম্পেও তাঁর মেয়াদকালে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৪০০ ডলার মূল্যের দুটি কার্পেট পেয়েছেন৷ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দুটি উপহারই নিয়ম অনুযায়ী জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে জমা দেওয়া হয়েছে৷
তালিকা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া এক লাখ ২০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের উপহার গ্রহণ করেছেন৷ তার আগের বছর পেয়েছিলেন ৮৮ হাজার ২০ ডলারের আর ক্ষমতায় আসার প্রথম বছর ২০১৭ সালে পেয়েছেন এক লাখ ৪০ হাজার ডলার সমমূল্যের উপঢৌকন৷
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়া, মিশর ও ভিয়েতনামের সরকার প্রধানরা ট্রাম্পকে আলোকচিত্র বা তাঁর নিজের পোট্রেট উপহার দিয়েছেন, যার আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ১০ হাজার ডলার৷ এছাড়াও মূল্যবান যেসব উপহার ট্রাম্প পেয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া সাড়ে আট হাজার ডলার মূল্যের অটোমান সাম্রাজ্যের রাইফেল, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্সের দেওয়া সাত হাজার ২০০ ডলারের ব্রোঞ্জের ঘোড়ার মূর্তি আর কাতারের আমিরের কাছ থেকে পাওয়া স্বর্ণ, হিরে, পান্নায় নির্মিত ছয় হাজার তিনশো ডলার সমমূল্যের অ্যরাবিয়ান অরিক্সের মূর্তি৷
তবে দামী উপহার প্রাপ্তিতে ট্রাম্পকেও পিছনে ফেলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অপারেশনে নিযুক্ত মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড এর তৎকালীন কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ভোটেল৷ ২০১৯ সালে তাকে কাতারের সরকার একাধিক ঘড়ি উপহার দেন, যেগুলোর মূল্য প্রায় ৩৭ হাজার ডলার৷ এর মধ্যে একটি রোলেক্স ঘড়িরই দাম ছিল ১৪ হাজার ৯৯৫ ডলার৷ ভোটেল পরে সেগুলো জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে জমা দেন৷ আলোকচিত্র, চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসনের সব উপহারই ন্যাশনাল আর্কাইভে সংরক্ষিত থাকার তথ্য রয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে৷ তবে নেই শুধু পম্পেয়োর হুইস্কির বোতলটিই৷