এক সিআরপিএফ (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স) জওয়ানের ছোড়া গুলিতে প্রাণ গেল তাঁরই দুই সহকর্মীর! ওই একই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আরও আটজন। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এই হত্যালীলা চালানোর পর অভিযুক্ত ওই জওয়ান নিজেও আত্মঘাতী হন বলে দাবি করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে মণিপুরে। অভিযুক্ত ও নিহত সিআরপিএফ জওয়ান সেখানেই কর্মরত ছিলেন বলে পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে।
আধাসেনাকে উদ্ধৃত করে পুলিশের সূত্র মারফত আরও জানানো হয়েছে, এদিন রাত প্রায় ৮টা নাগাদ ইম্ফল পশ্চিম জেলার লামস্যাংয়ে অবস্থিত সিআরপিএফ-এর শিবিরে এই মর্মান্তিক ও ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে।
এদিনের এই ঘটনা প্রসঙ্গে মণিপুর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছ, ‘আজ রাত ৮টা নাগাদ একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে ইম্ফল পশ্চিম জেলার লামস্যাং এলাকায় অবস্থিত সিআরপিএফ-এর শিবিরে এক সিআরপিএফ জওয়ান এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন। সেই ঘটনার ফলে তাঁর দুই সহকর্মীকে প্রাণ হারাতে হয়। ঘটনাস্থলেই ওই দুই সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়। এবং এই গুলিচালনার ফলে আরও আটজন আহত হন।’
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই জওয়ানও একইভাবে নিজের উপর গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাদের তরফে আরও জানানো হয়েছে, তাঁর কাছে যে সার্ভিস ওয়েপন ছিল, সেই আগ্নেয়াস্ত্রটি দিয়েই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়েছেন নিহত ওই জওয়ান। তবে, হঠাৎ করে তিনি কেন এতটা হিংস্র হয়ে উঠলেন, বা কেন এমন প্রাণঘাতী আচরণ করলেন, সেটা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। এই ঘটনার খবর পাওয়ার পরই পুলিশ ও সিআরপিএফ-এর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
অন্যদিকে, এদিনই মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ বলছে, এমনটা যে ঘটতে পারে, তার একটা আগাম আশঙ্কা ছিলই।
উল্লেখ্য, গত প্রায় দেড় বছর ধরে জাতি দাঙ্গা ও হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। কিন্তু, কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে কখনই সেভাবে এ নিয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করতে দেখা যায়। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর আসনে থাকা এন বীরেন সিং (বর্তমানে পদত্যাগী) লাগাতার মণিপুরের ঘটনাকে বহিরাগত, বিশেষ করে মায়ানমার থেকে আসা দুষ্কৃতীদের অপকর্ম বলে চালানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন।
এরই মধ্য়েই একটি অডিয়ো রেকর্ডিং ভাইরাল হয়। যা বীরেনের বলেই দাবি করা হচ্ছে (হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ওই অডিয়ো রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেনি)। তার প্রেক্ষিতে মণিপুরের কুকি জনগোষ্ঠী জাতি দাঙ্গার জন্য বীরেনকেই কাঠগড়ায় তোলে। অন্যদিকে, মণিপুর বিজেপির অন্দরেও বীরেনের বিরুদ্ধে বাকিরা একজোট হন। যার জেরে শেষমেশ বীরেন বাধ্য হন পদত্যাগ করতে। আর বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য়ে জারি করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসন।