করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে জারি হয়েছে লকডাউন। গোয়ায় ছেলের শেষকৃত্যে তাই উপস্থিত থাকতে না পেরে, মোবাইল ফোনে দাহ পর্বের সাক্ষী থাকলেন ঝাড়খণ্ডের প্রান্তিক গ্রামের হতভাগ্য দম্পতি।
নিহত ছেলের এক বন্ধু ভিডিয়ো কল মারফৎ তাঁদের এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেন। চোখের জলে ভিজে প্রথা মেনে ছেলের ফেলে যাওয়া জামাকাপড় কবর দিলেন বাবা-মা।
শেষকৃত্য সম্পন্ন হলে ঝাড়খণ্ডের সিমডেগা জেলার বারকিতাঙ্গর গ্রামের বাসিন্দা বথর বিয়াল্লিশের রামকুমার বরাইক বলেন, ‘লকডাউন থাকায় দেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। গোয়ায় ওর বন্ধুরা ভিডিয়ো কল করে আমাদের দাহকাজ দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।’
পাঁচ মাস আগে কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিলেন দিনমজুর রাম কুমারের একুশ বছর বয়েসি বড়ছেলে অর্জুন বরাইক। ছয় সদস্যের অভাবী সংসারের খরচ সামলাতে বাবা-মাকে সাহায্য করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য, জানিয়েছেন অর্জুনের কাকা সূরয বরাইক, যাঁর মোবাইল ফোনে ছেলের শেষকৃত্য দেখেছেন রাম কুমার ও তাঁর খেতমজুর স্ত্রী সরস্বতী দেবী।
সূরয জানিয়েছেন, কাজের সন্ধানে প্রথমে গুজরাত গিয়েছিলেন অর্জুন। কিন্তু সেখানে কাজ পছন্দ না হওয়ায় এর পরে তিনি গোয়া যান। সেখানে এক হোটেলে তিনি সাফাইকর্মীর চাকরি পান। কাজে মন বসে যাওয়ায় গোয়াতেই থেকে যান ওই তরুণ।
সপ্তাহখানেক আগে বাড়িতে খবর আসে, অর্জুন জন্ডিসে ভুগছেন। বাড়ি ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করেও লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বন্ধুরা তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করার পরে গত রবিবার মারা যান অর্জুন।
গোয়ায় অর্জুনের এক সহকর্মী ওডিশার বাসিন্দা নিকি গৌড় জানিয়েছেন, ‘গত দুই মাস যাবৎ আমরা মাডগাঁওয়ে এক হোটেলে কাজ করছিলাম। এক সপ্তাহ আগে ওর শরীর খারাপ করতে শুরু করে। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় ওকে আমরা স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু রবিবার রাত ন’টায় ও মারা যায়। চিকিৎসকরা বলেন, জন্ডিসের কারণেই ওর মৃত্যু হয়েছে।’