২০১৮ সালে নলিনী চৌধুরীর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল আদালত। কিন্তু, জামিন পেলেও মুক্তি পাননি তিনি। যার জেরে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর, ২০২৪) পর্যন্ত তাঁকে আটকে থাকতে হয়েছিল মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে!
ঝাড়খণ্ডের এই বাসিন্দাকে দীর্ঘ ছ'বছর ধরে যে এই দুর্ভোগ পোহাতে হল, তার কারণ কিন্তু তিনি নিজে নন। টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নলিনীর জামিন সংক্রান্ত নথিতে বেশ কিছু ভুল ছিল। তার জন্যই এত দিন তাঁকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তথ্য বলছে, জামিনের নথিতে 'ভুলবশত' নলিনী চৌধুরীর নাম লেখা হয় - 'ললোনি দেবী'! এবং তাঁর বসত ঠিকানা ঝাড়খণ্ডের বদলে হয়ে যায় - 'উত্তরপ্রদেশ'!
সূত্রের দাবি, এই ভুলের কারণ আরও এক ভুল! সেটা হল - নলিনী চোধুরীর ভোটার কার্ডে তাঁর ভুল নাম ও ঠিকানার উল্লেখ। সেই কারণেই আদালতের নির্দেশনামাতেও ভুল তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছিল!
২০১৭ সালে নলিনী চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর অপরাধ? তিনি কোনও কিছু না বুঝেই কলাইকুণ্ডায় বায়ু সেনার বিমানঘাঁটি ও লাগোয়া 'হাই সিকিউরিটি জোন' -এর আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন!
সেই সময় নলিনীর বয়স ছিল ৫২ বছর। ঘটনার সময় পুলিশ জানত না যে নলিনী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এবং কোনও কিছু না বুঝেই নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন!
খড়গপুর পুলিশ সেই সময় নলিনীকে গ্রেফতার করে। ভারতীয় দণ্ড বিধির ৪৪৭ ও ৩ নম্বর ধারা এবং ১৯২৩ সালের কার্যালয় গোপনীয়তা আইনের ৭ নম্বর ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।
২০১৮ সালে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (ডিএলএসএ) নলিনীকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে। এবং তিনি যাতে জামিন পেয়ে যান, তারা সেই ব্যবস্থা করে।
পশ্চিম মেদিনীপুর ডিএলএসএ-র সচিব শাহিদ পারভেজ এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, 'তিনি (নলিনী) জামিন পাওয়ার পর থেকে গত ছ'বছর ধরে আমরা এবং সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছি। আমাদের কাছে উত্তরপ্রদেশের ঠিকানা ছিল। সেখানে খবর পাঠানো হয়। কিন্তু, তার কোনও উত্তর আসেনি।'
তবে, এরপরও হার স্বীকার করেননি পারভেজ। গত নভেম্বর মাসে জেলে গিয়ে সরাসরি নলিনীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।
নলিনী পারভেজকে তাঁর বাড়ি ও পরিবার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য দেন। তারপর গুগল সার্চ করে এবং হ্যাম রেডিয়োর সাহায্যে নলিনীর আসল নাম ও ঠিকানা জানা যায়।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবশেষে নলিনী চৌধুরীর পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়।
নলিনীর ছবি দেখে তাঁকে শনাক্ত করেন তাঁর স্বামী লালজি চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে ঝাড়খণ্ডের পালামৌ থেকে মেদিনীপুর পৌঁছন তিনি।
কিন্তু, ভোটার কার্ডে এত বড় একটা ভুল থাকল কীভাবে? কেন তা দ্রুত সংশোধন করানো হল না?
এর উত্তর দিয়েছেন নলিনীর ভাই সত্যেন্দ্র চৌধুরী। তাঁর দাবি, ওটা ছিল একেবারেই অনিচ্ছাকৃত ভুল। যা নলিনী নিখোঁজ হওয়ার সময় পর্যন্ত সংশোধন করা হয়ে ওঠেনি।
নলিনীর স্বামী জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে যখন ওই প্রৌঢ়া নিখোঁজ হয়ে যান, সেই সময় তাঁর মানসিক সমস্যার চিকিৎসা চলছিল। পরবর্তীতে পুলিশে নিখোঁজ ডায়ারি করা হয়েছিল। কিন্তু, এত দিন তার কোনও সুফল পাওয়া যায়নি।
অবশেষে গত বৃহস্পতিবার নলিনীর পরিবারের সদস্যরা মেদিনীপুর পৌঁছন এবং শুক্রবার তাঁদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়। ২,০০০ টাকার বন্ডে শেষ পর্যন্ত নলিনী মুক্তি পান এবং তাঁকে তাঁর আপনজনেরা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান।