বাড়িতে দেশি মদ উৎপাদনের ব্যবসা ছেড়ে মুদির দোকান খুলে সৎ পথে রোজগারের সিদ্ধান্ত নিলেন ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার বধূ সংগীতা দাস, সৌজন্যে জাতীয় গ্রামীণ পেশা মিশন (National Rural Livelihood Mission)।
২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত নিজের বাড়িতে হাঁড়িয়া ও মহুয়া তৈরি করার অবৈধ ব্যবসা চালিয়েছেন উত্তরী মউভাণ্ডার পঞ্চায়েতের অন্তর্গত টুমাগাইংরি গ্রামের বাসিন্দা সংগীতা। কিন্তু এবার বৈধ উপায়ে রোজগারের চেষ্টা শুরু করতে চলেছেন তিনি।
সংগীতার কথায়, ‘শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালানোর জন্য দেশি মদের ব্যবসা ছাড়া তখন উপায় ছিল না। ২০১৭ সালে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগ দিই। সেখানেই জানতে পারি মদ্যপানের কারণে সামাজিক ক্ষতির সমস্যার কথা। জানতে পারি, মদ্যপ স্বামীর কারণে কত সংসার ভেঙে গিয়েছে। একাধিক মহিলার কাছে শুনতে পাই, কী ভাবে মদে চুর হয়ে স্ত্রীকে মারধর করেন স্বামীরা এবং সন্তানদের উপরে তার কু-প্রভাবের কথা। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, অবৈধ মদ তৈরির ব্যবসা ছেড়ে দেব।’
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে মদের ব্যবসায় ঝাঁপ ফেলে দিয়ে মুদির দোকান খুলে ফেলেন সংগীতা। এই কাজে তিনি NRLM এর অধীনে থাকা ফুলো ঝানো আশির্বাদ যোজনায় মা দুর্গা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর থেকে সুদছাড়া ১০,০০০ টাকা ঋণ পেয়েছেন।
সংগীতা জানিয়েছেন, মুদির দোকান খোলার পরে তিনি দৈনিক ২০০ থেকে ৩৩০ টাকা আয় করছেন। এমনকি স্বামীর জন্যও ওই ঋণের অর্থের একাংশ লগ্নি করে সবজির ব্যবসা খুলে দিয়েছেন তিনি। মদতৈরির ব্যবসার থেকে বর্তমানে তাঁদের সংসারে আয় বেড়েছে বলে দাবি বধূর।
সংগীতা একাই নন, দেশি মদের ব্যবসা ছেড়েছেন জেলার দমপক্ষে ১৫০ মহিলা। NRLM মারফৎ ঋণ নিয়ে তাঁরা ডেয়ারি ব্যবসা, চাষ-আবাদ, ফুল চাষ এবং সবজি বিক্রির মতো বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন।
ঝাড়খণ্ড রাজ্য পেশা প্রচার সোসাইটি-র জেলা ব্যবস্থাপক জেভিয়ার এক্কা জানিয়েছেন, ‘ফুলো ঝানো আশির্বাদ প্রকল্পের অধীনে মহিলাদের অবৈধ মদ তৈরির ব্যবসা ছেড়ে NRLM এর সাহায্যে বিকল্প রোজগারের জন্য সৎ পথে থাকতে অনুপ্রাণিত করা হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্প চালু হয় এবং ইতিমধ্যে ১৫০ জন মহিলা তার সুবিধা ভোগ করছেন। তাঁরা সকলেই অবৈধ দেশি মদ তৈরির ব্যবসা ছেড়ে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। এই সব মহিলাদের নতুন পেশা গ্রহণ করতে জহর যোজনার অধীনে দিদি স্বনির্ভর গোষ্ঠী মারফৎ সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য সুদহীন ঋণ দেওয়া হয়।’
জেভিয়ারের দাবি, জেলায় বেআইনি দেশি মদ ব্যবসায় জড়িত মোট ৫৮১ মহিলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৫০ জন ইতিমধ্যে বিকল্প আয়ের সুযোগ পেয়ে মদ উৎপাদন বন্ধ করেছেন। বর্তমানে আরও ২২১ মহিলাকে কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ২১০ জন মহিলাকে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেভিয়ার এক্কা।