দ্য সান-এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানে তালিবানদের উচ্চ স্তরের নেতৃত্ব এমনই নির্দেশ পাঠিয়েছে ক্ষুদ্র নেতাদের। বিয়ের জন্য মেয়েদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, '১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মেয়েদের পাঠাতে হবে। নয়তো ৪৫ বছরের কম বয়সি বিধবাদের পাঠানো যেতে পারে।'
তালিবান 'যোদ্ধাদের' সঙ্গে বাড়ির মেয়েদের 'বিয়ে' দিতে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের নির্দেশিকা জারি করেছে আতঙ্কবাদী সংগঠন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিয়ে যে প্রকৃতপক্ষে যৌনদাসী করে রাখারই সামিল, তা বলাই বাহুল্য। বলা হয়েছে, তাদের তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে পাকিস্তানে পাঠানো হবে।
মার্কিন, ব্রিটিশ সেনা সরতেই দখলদারি
মার্কিন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ক্রমেই আফগানিস্তান ছেড়ে চলে আসছে। প্রায় ২০ বছর পর সেখান থেকে চলে আসছে মার্কিন সেনা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তালিবানের দৌরাত্ম্য। বিভিন্ন এলাকায় চলছে যথেচ্ছ দখলদারি। আফগান সেনার সঙ্গেও বাড়ছে সংঘর্ষ। রিপোর্ট বলছে, ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের ৮৫% চলে গিয়েছে জঙ্গিদের দখলে।
কট্টরপন্থী নিয়ম
ধর্মের শাসনের নামে যুক্তিহীন, ক্ষতিকর উগ্রপন্থা। আফগানিস্তানে নতুন করে দখল করা বহু স্থানে জারি করা হয়েছে শারিয়া আইনের কট্টরপন্থী নিয়ম। মা-বাবাদের বাধ্য করা হচ্ছে মেয়েদের জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ের জন্য তাদের হাতে তুলে দিতে। নয় তো আগ্নেয়াস্ত্র তো আছেই।পরিস্থিতি এমনই যে যাঁদের সুযোগ আছে, আফগানিস্তান ছেড়ে কন্যাসন্তান নিয়ে পালাচ্ছেন।
শুধু মহিলাদের দুর্দশা, এমনটাই নয়। ধূমপান ও দাড়ি কামানোর মতো ব্যক্তিগত বিষয়েও জারি হয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। এমনকি গান চালাতেও ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা। কারণ তালিবান টহলদারদের কানে গেলেই মৃত্যু অনিবার্য। হাজি রোজি বাইগ (নাম পরিবর্তিত) নামে এক বৃদ্ধ তখরের খাজা বহউদ্দিন জেলার বাসিন্দা। তাঁর দুটি মেয়ে। একজনের বয়স ২৩ বছর, অপর জন ২৪ বছরের। তিনি জানান, 'আমি তো বটেই তাঁর পরিচিত যাঁদের মেয়ে আছে, সকলেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছে তালিবানরা।'
তিনি বলেন, 'সরকারের শাসনে আমরা কত শান্তিতে ছিলাম! অন্তত আমাদের স্বাধীনতা ছিল।' সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'তালিবান দখল নেওয়ার পর থেকেই আমরা আশঙ্কায় ভুগছি। জোরে কথা বলতে পারছি না, গান শুনতে পারছি না, সিনেমা দেখা বারণ এমনকি মহিলারা বাড়ির সামনে বাজারটুকু যেতে সাহস পাচ্ছেন না।'
আপনার বাড়ির মহিলারা সুরক্ষিত? প্রশ্নের উত্তরে বৃদ্ধ জানান, 'ওদের(তালিবান) এক সাব-কম্যান্ডার এসেছিল। বলল বাড়িতে ১৮-র বেশি বয়সী মেয়ে রাখা যাবে না। সেটা পাপ। বিয়ে দিতেই হবে।' কাঁদতে কাঁদতে হাজি বলেন, 'ওরা আমার বাড়িতে কে কে আছে, এসে দেখে গিয়েছে। আমি নিশ্চিত, আমার চোখের সামনে ওরা আমার দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। ওদের জোর করে জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে।'
মহিলারা বাড়ি থেকে বের হলে তার আগে অনুমতি নিতে হবে স্থানীয় তালিবান নেতার। আর হিজাব বাধ্যতামূলক তো আছেই। তবে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে তালিবানরা। শিক্ষিকা মহিলা হলে তবেই যাওয়া যাবে। নিয়ম তাদের।