মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপে বন্ধ হল জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনাভাইরাসের টিকার ব্যবহার। বিরল ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রিপোর্টের পরেই তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬৮ লাখ ব্যক্তি এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মোট ছ'জনের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা হয়েছে। এরপরেই সাবধানতা অবলম্বন করে প্রয়োগ বন্ধ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধের নিয়ন্ত্রক ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)। অন্যদিকে চলতি সপ্তাহেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলিতে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়। আপাতত সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করেছে সংস্থা।
কেন বন্ধ হল?
FDA-র বক্তব্য, সাবধানের মার নেই। তাই সময় থাকতেই এর ব্যবহার স্থগিত করা হয়েছে। টিকা গ্রহণের পরেই রক্ত জমাট বেঁধে একজনের মৃত্যু হয়। আরেক টিকা গ্রহণকারীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর।
যে ৬ জন টিকা গ্রহণকারীর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের প্রত্যেকেই মহিলা। প্রত্যেকেরই বয়স ১৮ থেকে ৪৮ বছরের মধ্যে। অভিযোগ, টিকাগ্রহণের ৬ থেকে ১৩ দিনের মাথায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা। এরপরেই নড়েচড়ে বসে FDA। স্থগিত করা হয় এর প্রয়োগ। ঘটনাগুলির তদন্ত শুরু হয়েছে।
অন্যান্য করোনা টিকার থেকে কিছুটা আলাদা
জনসন অ্যান্ড জনসনের এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন হচ্ছে বেলজিয়ামে। অন্যান্য টিকাগুলির থেকে এটি কিছুটা আলাদা। একবার টিকার ডোজ নিলেই যথেষ্ট। অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে সাধারণত নির্দিষ্ট সময় অন্তর দুটি করে ডোজ নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সেই ব্যাপার নেই।অন্যদিকে সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা যায় জনসন অ্যান্ড জনসনের করোনা টিকা। ফলে দুর্গম স্থান, উষ্ণতর দেশে পাঠানো ও সংরক্ষণ করাও বেশ সহজ।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের অনুমোদন পেযেছিলেন এই টিকা। ফিজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার পাশাপাশি ছাড়পত্র পেয়েছিল এই টিকা। তবে আপাতত টিকা প্রয়োগ বন্ধ। কিন্তু এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মুখ্য পরামর্শদাতা অ্যান্টনি ফউসি।
বন্ধ দক্ষিণ আফ্রিকাতেও
দক্ষিণ আফ্রিকাতেই প্রথম প্রয়োগ শুরু হয় জনসন ও জনসনের এই ভ্যাকসিনের। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এখনও পর্যন্ত তিন লাখ স্বাস্থ্যকর্মী এই টিকা নিয়েছেন। কিন্তু এই অভিযোগের পর সেখানেও স্থগিত এই টিকার ব্যবহার।
জনসন অ্যান্ড জনসনের বক্তব্য
এই বিষয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে জনসন অ্যান্ড জনসন। সেখানে প্রতিটি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে দাবি সংস্থার। 'আমরা থ্রম্বোএম্বলিক (রক্ত জমাট) কেসগুলির বিষয়ে ওয়াকিবহাল। বর্তমানে এই বিরল ঘটনাগুলির সঙ্গে আমাদের করোনা টিকার কোনও সরাসরি যোগাযোগ পাওয়া যায়নি,' বিবৃতিতে জানিয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন।
একই অভিযোগে স্থগিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনও
অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের ডেভেলপ করা টিকা গ্রহণের পর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ এসেছে একাধিক দেশ থেকে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্ত জমাট বাঁধার রাখা উচিত, মত ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সির (EMA)। ষাটোর্ধ্বদের এই টিকা প্রয়োগ বন্ধ করেছে একাধিক দেশ।