করোনাকালে ভারত সরকারের উদ্যোগে বিনামূল্যে সমগ্র দেশবাসীকে কোভিডের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে দেখা যায়, অল্পবয়সীদের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। নানা মহলে এ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, তাহলে কি করোনার 'জীবদায়ী প্রতিষেধক'ই আদতে 'প্রাণঘাতী' হয়ে উঠেছে?
এখনও পর্যন্ত এই আশঙ্কার পক্ষে কোনও প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এ নিয়ে আলোচনা থামেনি। উপরন্তু, সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কেন এভাবে হঠাৎ করে অল্পবয়সীদের মৃত্যু ঘটছে, সেটা স্পষ্ট না হলেও এর জন্য মোটেও করোনার প্রতিষেধক দায়ী নয়।
বরং, এই প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল বলেই বহু রোগীর ক্ষেত্রে করোনার প্রকোপ কমানো সম্ভব হয়েছিল। বহু মানুষকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি এবং সর্বোপরি এই প্রতিষেধকের কারণেই কিছুটা হলেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় রাশ টানা সম্ভব হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এই প্রতিষেধক মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার আগে একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিষেধক সম্পূর্ণ রূপে নিরাপদ - এটা প্রমাণিত হওয়ার পরই তা জনতার শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জে পি নড্ডা। তিনি দাবি করেন, করোনার প্রতিষেধকের জন্য অন্তত অল্পবয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্য়াটাকের প্রবণতা বাড়েনি।
মন্ত্রী এই প্রসঙ্গে বলেন, ভারতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর কারণ বাড়ায়নি করোনার প্রতিষেধক। ২০২১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চের মধ্য়ে যে অল্পবয়সীরা হঠাৎ করেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিলেন, এবং মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যাঁরা যথেষ্ট সুস্থ ছিলেন এবং যাঁদের সেই অর্থে কোনও কো-মর্বিডিটি ছিল না, তাঁদের উদ্দেশ করেই এই দাবি করেছেন নড্ডা।
এই বিষয়টি নিয়ে গত বছর অগস্ট মাসে একটি সমীক্ষা করে আইসিএমআর। যার শিরোনাম ছিল - 'ফ্যাক্টরস অ্য়াসোসিয়েটেড উইথ আনএক্সপ্লেনড সাডেন ডেথস অ্যামোং ১৮-৪৫ ইয়ার্স ইন ইন্ডিয়া'। অর্থাৎ - সংশ্লিষ্ট সময়ের মধ্যে ভারতে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী সেইসব ব্যক্তি, যাঁদের হঠাৎ কোনও কারণ ছাড়াই মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের নিয়েই এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।
সারা দেশের মধ্যে ১৯টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের ৪৭টি চিকিৎসা কেন্দ্রে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই সমীক্ষার অধীনে মোট ৭২৯টি মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখা হয়েছিল।
অল্পবয়সীদের আকস্মিক মৃত্যুর কারণ কী ছিল?
সংশ্লিষ্ট সমীক্ষায় উঠে আসে, এই হঠাৎ বা আকস্মিক মৃত্যুগুলির পিছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন - করোনার আগেও নানা কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, পরিবারে পূর্বেও এই ধরনের মৃত্যু ঘটা, বিভিন্ন ধরনের ওষুধের প্রয়োগ এবং মৃত্যুর আগে শেষ ৪৮ ঘণ্টার মধ্য়ে অত্যাধিক কায়িক শ্রম - আকস্মিক মৃত্যুর নেপথ্য়ে এমন নানা কারণই উঠে এসেছে।
এই প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী দাবি করেন, 'তাই, এই সমীক্ষা থেকেই স্পষ্ট যে করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য ভারতের অল্পবয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়নি। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের করোনার আগেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁদের পরিবারে অতীতেও আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল এবং কিছুক্ষেত্রে তাঁদের জীবন যাপনও এর জন্য দায়ী ছিল।'