উৎকর্ষ আনন্দ
বিচারকরা যেন সম্রাটের মতো ব্যবহার না করেন। শুক্রবার এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে অবিলম্বে সরকারি আধিকারিকদের হাজিরার নির্দেশ এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে চাপ দেওয়ারও নিন্দা করল শীর্ষ আদালত।
শুক্রবার বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ ক্ষুণ্ণ হয়ে জানায়, নিয়মিত সরকারি আধিকারিকদের তলব করার স্বভাব তৈরি হয়েছে কয়েকটি হাইকোর্টের। যা জনস্বার্থ-বিরোধী। কারণ তলবের ফলে ওই আধিকারিকদের উপর যে কাজের ভার দেওয়া থাকে, তা বিলম্বিত হয়ে যায়। ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উদ্ধৃত করে ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়, ‘বিচারকদের অবশ্যই নিজেদের সীমা জানা উচিত। তাঁদের মধ্যে অবশ্যই বিনয় এবং নম্রতা থাকতে হবে। তাঁরা যেন সম্রাটের মতো ব্যবহার না করেন। আইনসভা, প্রশাসন এবং বিচারবিভাগের কাজ করার নিজস্ব বৃহৎ ক্ষেত্র আছে। এটা মোটেও ঠিক নয় যে রাষ্ট্রের এই তিনটি অঙ্গের মধ্যে অপর কোনও একটির কাজের সীমার বলপূর্বক প্রবেশ করবে। নাহলে সংবিধানের সুন্দর ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। তার প্রতিক্রিয়াও হবে।’
উত্তরপ্রদেশের এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের বদলি এবং বেতন ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এসেছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। গত ফেব্রুযারিতে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। যে রায়ে ওই স্বাস্থ্য আধিকারিককে বেতন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পরও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে স্বাস্থ্যসচিবকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়েছে, অকারণে সরকারি আধিকারিকদের আদালতে তলব না করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হবে। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়, 'যখন কোনও আধিকারিককে আদালতে তলব করা হয়, তখন মোটেও আদালতের মর্যাদা ও মহিমা বৃদ্ধি পায় না।' শীর্ষ আদালতের তরফে আরও বলা হয়, ‘সরকারি আধিকারিকরা প্রশাসনের তৃতীয় অঙ্গ হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে। আধিকারিকরা যে কাজ করেন বা সিদ্ধান্ত নেন, তা নিজেদের সুবিধার জন্য নয়। বরং জনসাধারণের অর্থের রক্ষক হিসেবে নেন। প্রশাসনের স্বার্থে কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।’
সেইসঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরুর যে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট, তা খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। স্বাস্থ্য আধিকারিককে বেতন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ওই স্বাস্থ্য আধিকারিককে বেতন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ভুল করেছে হাইকোর্ট। যিনি ২০০২ সালে জয়েনিং অর্ডার না পাওয়ার যুক্তি খাড়া করে ১৩ বছর কাজে যোগ দেননি। সেই প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, একই বদলির নির্দেশে যখন ১০০ জনের বেশি স্বাস্থ্য আধিকারিককে অন্যত্র কাজে পাঠানো হয়েছে, তখন বদলির নির্দেশ না পাওয়ার অজুহাতে কাজে যোগ না দিয়ে থাকতে পারেন না।