দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান হল। হুইসল ব্লোয়িং ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অবশেষে মুক্তি পেলেন ব্রিটেনের জেল থেকে। তিনি আমেরিকার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হতে প্রস্তুত। এই শর্তে বৃটেনের জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। জানা যাচ্ছে, ব্রিটেনের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই তিনি আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। চলতি সপ্তাহেই আমেরিকার আদালতে পেশ করে হতে পারে জুলিয়ানকে। মার্কিন সেনাবাহিনীর একাধিক গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল জুলিয়ানের বিরুদ্ধে। তা নিয়েই চলে এতদিনের আইনি লড়াই।
আরও পড়ুন: জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জেকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণের দাবি নাকচ করল ব্রিটিশ আদালত
আমেরিকার সঙ্গে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে সেই সময় একাধিক তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল জুলিয়ানের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি আমেরিকান সেনাবাহিনীর প্রায় ৫ লক্ষ নথি ফাঁস করেছিলেন। সেই সংক্রান্ত তথ্য ২০১০ সালে ফাঁস করা হয়েছিল। আর অভিযোগ উঠেছিল, মার্কিন সরকারের কম্পিউটার হ্যাক করে ওই সমস্ত গোপন নথি পেয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। ইরাকের মার্কিন সেনা অভিযানের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখানো হয়েছিল যে ২০০৭ সালে ইরাকে মার্কিন হেলিকপ্টার থেকে সাধারণ নাগরিকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে। আর তাতে নিহত হয়েছিলেন দুই সাংবাদিক। সেই সময় এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
এরপরেই দেশের গোপনীয়তা ফাঁস করে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সূত্রকে বিপন্ন করার অভিযোগ উঠেছিল জুলিয়ানের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে মার্কিন আদালত জুলিয়ানকে দোষী সাব্যস্ত করে। এদিকে, এই অভিযোগ ওঠার পরেই সুইডেনে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। তখন তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে ইকুয়েডর তাঁর ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে সেখানে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও যৌন নিগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। তারপর থেকেই তিনি লন্ডনের জেলে বন্দি রয়েছেন।
এদিকে, জুলিয়ানকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণ নিয়েও বেশ জলঘোলা হয়েছিল। ২০২২ সালে জুলিয়ানকে ব্রিটেন সরকার জুলিয়ানকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছিল। তবে পরে সেই বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে জুলিয়ান নিজেই আমেরিকার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হতে রাজি হয়েছেন। সেই শর্তে তাঁকে এদিন জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করার জন্য আমেরিকার কঠোর আইনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অনেকেই দাবি করেছিলেন যে তাঁর ১৭৫ বছর জেল হতে পারে। তবে আপাতত তা হচ্ছে না। জুলিয়ানের সংস্থাটির তরফে তাঁর লড়াইয়ে যারা সঙ্গে ছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।