বাবিয়া। শান্ত এক কুমির। কীভাবে এর নামকরণ হয়েছিল, কোথা থেকে এসেছিল— কেউ জানে না। বা জানলেও, এখন আর মনে নেই। কত বছর ধরে এখানে ছিল বাবিয়া তা নিয়েও নানা রকম মতামত আছে। মোদ্দা কথা, অনেকের মতেই বাবিয়া ছিল পৃথিবীর একমাত্র কুমির, আমিষ খাবারে যার কোনও রুচি ছিল না। এহেন বাবিয়া মৃত।
কোথায় থাকত বাবিয়া?
উত্তর কেরলের কাসারগড়ের খুব নামকরা একটি মন্দির অনন্তপুরা। এক সময় বাবিয়ার কারণেও এই মন্দিরের নাম অনেকে জানতে পেরেছিলেন। কারণ বাবিয়া ছিল এই মন্দিরের অন্যতম সদস্য। মন্দির সংলগ্ন পুকুরে থাকত সে। অনেকেই শুধু বাবিয়াকেই দেখতেই এখানে আসতেন।
কীভাবে খবরে আসে বাবিয়া?
বছর দুয়েক আগের কথা। একদিন হঠাৎ দেখা যায়, বাবিয়া মন্দিরের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দর্শনার্থীদের অনেকেই বেশ ঘাবড়ে যান তাকে দেখে। যদিও পরে জানা যায়, বাবিয়া কারও কোনও ক্ষতি তো করেইনি, বরং অনেকে তাকে দেখে ভয় পাচ্ছে দেখে, মন্দিরের প্রধান পুরোহিত নাকি তাকে বলেন, জলাশয়ে ফিরে যেতে এভং সকলের সামনেই সে পুকুরে চলে যায়। তাতেই বাবিয়াকে নিয়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
কেন বিখ্যাত বাবিয়া?
শোনা যায়, বাবিয়া কখনও আমিষ খাবার কিছু খায়নি। এই মন্দিরের যে প্রসাদ হত, তাই তাকে খেতে দেওয়া হত। সেটিই খেত সে। কখনও কখনও মন্দিরের পুরোহিতরা তাকে ভাতের দলা দিতেন। সেটিও খেত সে। পুরোহতিদের সঙ্গে তার এক অদ্ভুত বন্ধন তৈরি হয়ে গিয়েছিল বলেও শোনা যায়। অনেক সময়েই নাকি পুরোহিতরা ভাতের দলা তাকে খাইয়ে দিতেন। যে পুকুরে বাবিয়া থাকত, সেই পুকুর মাছে ভর্তি। কখনও কোনও মাছকেও বাবিয়া আক্রমণ করেছে বলে শোনা যায়নি।
কোথা থেকে এল বাবিয়া?
এই পুকুরে কুমিরের কোনও দিনই কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ফলে এ কথা বলা খুব মুশকিল, সে কোথা থেকে এল। তবে বহু স্থানীয় বাসিন্দার মত, বাবিয়া নাকি মন্দিরের পুকুরে প্রায় ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস করত। কেরলের এই এলাকা সার্কাসের জন্য বিখ্যাত। এক সময়ে এখানে বহু সার্কাসের দল ছিল। অনেকেরই ধারণা, তেমনই কোনও দল কখনও কুমির ছানাটিকে এই পুকুরে ছেড়ে দিয়ে যায়। আর এখানেই বড় হতে থাকে সে।
কীভাবে নামকরণ হয়েছিল?
এটি নিয়ে কোনও স্পষ্ট মতামত নেই। কীভাবে তার নাম বাবিয়া, কে তার এই নাম রেখেছিল— প্রায় কোনও তথ্যই নেই এই বিচিত্র কুমির সম্পর্কে।
সোমবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাবিয়া আর নেই। মৃত্যু হয়েছে তার। তার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হল মানুষ এবং অন্য প্রাণীদের মধ্যে যে বিচিত্র বন্ধন তৈরি হতে পারে, তেমনই একটি উদাহরণেরও।
মন্দিরের পুরোহিতদের স্মৃতিতে এবং স্থানীয়দের লোককাহিনিতে থেকে যাবে এই কুমির। থেকে যাবে প্রকৃতির এক বিস্ময় হিসাবে।