বেঙ্গালুরুর তরুণ প্রযুক্তিবিদ, ৩৪ বছরের অতুল সুভাষের আত্মহত্যা এবং তাঁর অন্তিম ভিডিয়ো বার্তা ভারতবাসীকে যতটা ব্যথিত করেছে, ততটাই ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ করেছে। আজ সারা দেশ চাইছে, যে বা যারা ওই তরুণকে এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করল, আইনি পথে তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক।
সোশাল মিডিয়াতেও এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন সচেতন ভারতীয়রা। যার জেরে গত কয়েক দিন ধরে সমাজমাধ্যমে ট্রেন্ড করছে - #JusticeForAtulSubhash (হ্যাশট্যাগজাস্টিসফরঅতুলসুভাষ)। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এরই সঙ্গে ক্রমশ ট্রেন্ডিং উঠে এসেছে আরও একটি হ্যাশট্যাগ - #JusticeForRishi (হ্যাশট্যাগজাস্টিসফরঋষি)!
এখন প্রশ্ন হল, কে এই ঋষি? কেন তাঁর জন্যও সুবিচার চেয়ে সরব হচ্ছে সমাজমাধ্যম? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই উঠে এল আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা। যা আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার শুধুই কি নারী? নাকি পুরুষকেও তার সমান খেসারত দিতে হয়?
কে এই ঋষি?
অতুল সুভাষের আত্মহত্যা নিয়ে দেশজুড়ে হইচই শুরু হতেই ঋষি ত্রিবেদীর হয়ে সোচ্চার হয়েছেন তাঁরই ভাই ওমজি ত্রিবেদী। ওমজি জানিয়েছেন, অতুলের মতোই তাঁর ভাইয়ের উপরেও চরম 'মানসিক অত্যাচার' চালিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। যা সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর আত্মঘাতী হন ওই যুবক।
মৃত্যুর আগে ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো রেকর্ড করে গিয়েছিলেন ঋষি। সেই ছোট্ট ভিডিয়ো বার্তায় ঋষি সরাসরি তাঁর স্ত্রীকেই তাঁর আত্মহত্যার জন্য কাঠগড়ায় তুলে গিয়েছেন।
ঋষির সেই শেষ ভিডিয়ো বার্তা নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন তাঁর ভাই ওমজি। তুলে ধরেছেন এক মর্মান্তিক তথ্য। ওমজি লিখেছেন, 'অতুল সুভাষের মতো আমার ভাইও ঠিক একইভাবে নিজের স্ত্রী - শিখা অবস্তির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি আত্মহত্যা করেন। তিনি আর অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলেন না। '
ওমজি আরও জানান, স্বামীর মৃত্যুর পরও শিখার অত্যাচার ও হুমকি বন্ধ হয়নি। লজিক্যাল ইন্ডিয়ান -এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ঋষির আত্মহত্যার খবর পেয়েই বাপের বাড়ি থেকে ফিরে আসেন শিখা। শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের হুমকি দেন, তাঁরা যদি তাঁকে ৫ লক্ষ টাকা না দেন, তাহলে তিনি ঋষির শেষকৃত্য করতে দেবেন না!
ওমজি এই প্রসঙ্গে আরও জানিয়েছেন, 'তিনি (শিখা) আমাদের অপমান করেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন, এবং আমাদের পরিবার সম্পর্কে গালিগালাজ করেন।'
এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন ওমজি। তাঁর অভিযোগ, তাঁরা যখন এই বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, সেই সময় পুলিশ তাঁদের পাত্তাই দেয়নি! এমনকী, ওমজির পরিবার শিখার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও পুলিশের তরফে তা খতিয়ে দেখা হয়নি।
ওমজির দাবি, শিখার অনেক চাহিদা ছিল। যা মেটানোর জন্য দরকার ছিল প্রচুর টাকা। সেই টাকা রোজগারের জন্য দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা ট্যাক্সি চালাতেন ঋষি।
লজিক্যাল ইন্ডিয়ান-এর পেশ করা তথ্য অনুসারে, ওমজি জানান, 'শিখা প্রায় দিনই ভোর ৫টায় ঋষিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে দিতেন। তারপর তাঁকে মরতে বলতেন!'
ওমজির দাবি, স্ত্রীর কাছে লাগাতার লাঞ্ছিত হতে হতে ঋষি নিজেকে 'আবদ্ধ ও একা' ভাবতে শুরু করেন! এবং তার জেরেই শেষমেশ নিজেকেই শেষ করে দেন ওই তরুণ।