তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাকি কৃষ্ণাঙ্গ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচনের আগে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কমলা হ্যারিস যে তাঁর ভারতীয় নাড়ির টান ভোলেননি, তা প্রমাণ করতে একটি 'অপ-এড' পাবলিশ করলেন। 'দ্য জাগারনট' নামক এক দক্ষিণ এশিয়ান পাবলিকেশনে কমলা হ্যারিস এই 'অপ-এড' লেখেন। কমলা সেখানে দাবি করেন, 'মা আমাদের ঐতিহ্যকে সম্মান করতে শিখিয়েছিলেন। সেভাবেই তিনি আমাদের বড় করেছিলেন। ছোটবেলায় প্রায় প্রতি এক বছর অন্তর অন্তর দিওয়ালিতে আমরা ভারতে যেতাম। সেখানে দিদা, দাদু, মামাদের সঙ্গে সময় কাটাতাম।' কমলা লেখেন, 'ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও আমি দিওয়ালি পালন করেছি সরকারি বাসভবনে। সেটা ছুটি কাটাতে নয় বরং ঐতিহ্যের উদযাপন করতেই পালন করতাম আমি।' (আরও পড়ুন: কানাডার মন্দিরে খলিস্তানিদের হামলার নিন্দায় ভারত, তুলে ধরল ট্রুডোর ব্যর্থতা)
আরও পড়ুন: 'লাল রেখা পার...', কানাডার মন্দিরে খলিস্তানি হামলায় সরব ট্রুডোর দলেরই সাংসদ
এদিকে কমলা হ্যারিস দাবি করেছেন, তিনি তাঁর দাদুর থেকেই গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের জন্যে লড়াইয়ের গুরুত্ব শিখেছেন। এই নিয়ে তিনি লেখেন, 'আমি যখন ছোট ছিলাম এবং ভারতে যেতাম, তখন আমার দাদু পিভি গোপালনের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতাম। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরাকরি কর্মী ছিলেন। তখন সেটা মাদ্রাস ছিল। আমার দাদু তাঁর অবসরপ্রাপ্ত বন্ধুদের সঙ্গে সকালবেলায় সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে যেতেন। আমিও তাঁর সঙ্গে যেতাম। তাঁদের কথাবার্তা ও নানান গল্প শুনতাম। সেখানেই তাদের থেকে আমি শুনতাম যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিার রক্ষার জন্যে লড়াই কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকে আমি যা শিখেছিলাম, তাতেই আমি পাবলিক সাভিসে আসতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। এবং আজও আমাকে সেই শিক্ষা পথ দেখায়।' (আরও পড়ুন: 'সেনা প্রত্যাহার তো একটা অংশ মাত্র...', ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে বড় আপডেট জয়শংকরের)
আরও পড়ুন: 'তলে তলে চুক্তি... হাসিনাকে আশ্রয় কেন?', অনুপ্রবেশ ইস্যুতে শাহকে তোপ হেমন্তের
এদিকে সম্প্রতি আবার মায়ের আর নিজের পুরনো ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন কমলা হ্যারিস। সেখানে তিনি লেখেন, 'আমার মা ডঃ শ্যামলা গোপালন হ্যারিস ১৯ বছর বয়সে একা ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তাঁর সাহস ও দৃঢ় সংকল্পের কারণেই আজ আমি আমার বর্তমা স্থানে আছে।' এদিকে 'অপ-এড'-এ নিজের মাকে নিয়ে কমলা লেখেন, 'আমার মায়ের জীবনে দুটো লক্ষ্য ছিল - এক হল, আমাকে এবং আমার বোন মায়াকে বড় করা। আর দ্বিতীয়, স্তনের ক্যান্সার নির্মূল করা।' এদিকে অনেকেই দাবি করছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন কমলা। তাই এই 'অপ-এড'-এ নিজের 'ভারতীয় সত্ত্বা' তুলে ধরেছেন কমলা।
এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন কমলা। আমেরিকার প্রথম মহিলা হিসেবে উপ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। আর এবার তিনি যদি ট্রাম্প হারাতে পারেন, তাহলে প্রথম মহিলা, এশিয়ান বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে এই পদে আসীন হবেন। প্রসঙ্গত, কমলা হ্যারিসের মা ভারতীয় ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। কমলার মা প্রয়াত শ্যামলা গোপালান ছিলেন তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। পরে পড়াশোনার সূত্রে আমেরিকায় যান তিনি। সেখানে গিয়ে এক কৃষ্ণাঙ্গের প্রেমে পড়েন ও তাঁকে বিয়েও করেন। যদিও খুব বেশি দিন টেকেনি সেই বিয়ে। কর্মসূত্রে আমেরিকায় থেকে গেলেও ভারতের সঙ্গে যোগ ছিন্ন করেননি শ্যামলা। ছুটিতে চেন্নাইতেও নিয়ে আসতেন তাঁর দুই মেয়েকে।