গত লোকসভা ভোটের মুখে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন এক হবু বর। আর, শুধুমাত্র সেই কারণেই সেই যুবক-সহ মোট দু'জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা রুজু করা হয়! যা দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ আদালত। মামলাটি শুনানির জন্য কর্ণাটক হাইকোর্টে উঠলে, সংশ্লিষ্ট অভিযোগ পড়ে তা খারিজ করে দেন বিচারপতি। সেইসঙ্গে, মামলাকারীকে রীতিমতো কড়া কথা শোনান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলায় যে দু'জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারা প্রয়োগ করে মামলা রুজু করা হয়েছিল, তাঁরা হলেন - শিবপ্রসাদ এবং এ বালাকৃষ্ণ। এঁদের মধ্যে প্রথম জন হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁর বিয়েতে উপরোক্ত নিমন্ত্রণপত্রগুলি ছাপানো হয়েছিল। আর, এ বালাকৃষ্ণ হলেন প্রকাশক। তাঁর একটি ছাপাখানা রয়েছে। তিনিই বিয়ের ওই নিমন্ত্রণপত্র ছাপিয়েছিলেন।
সাধারণত, বিয়ের নিয়ন্ত্রণপত্রে অনেকেই নানা ধরনের বার্তা দেন। যেমন - অনেক ক্ষেত্রেই নিমন্ত্রণকারী নিমন্ত্রিতদের উদ্দেশে আবেদন করেন, তাঁরা যাতে কোনও উপহার সঙ্গে না আনেন। কিংবা, বিয়েতে নবদম্পতিকে যেন শুধুই আশীর্বাদ উপহার দেওয়া হয় - ইত্যাদি।
তবে, শিবপ্রসাদ তাঁর বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা ছিল একটু অন্যরকম। তিনি ছাপার অক্ষরে লিখিয়েছিলেন - 'আপনি যদি নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দেন, তাহলে সেটাই হবে আমার বিয়ের সেরা উপহার'!
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র এই কারণেই শিবপ্রসাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা রুজু করা হয়। উল্লেখ্য, এই শিবপ্রসাদ দক্ষিণ কন্নড় জেলার আলন্থ্য গ্রামের বাসিন্দা। অন্যদিকে, এই মামলায় অপর অভিযুক্ত এ বালাকৃষ্ণের বাড়ি গোলিথোট্টু গ্রামে।
চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল এই দু'জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ড বিধির ১৮৮ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হয়। একইসঙ্গে, নাগরিক আইনের ১২৭এ ধারাটিও এই মামলায় যোগ করা হয়।
আদালত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, চলতি বছরেরই ২৭ মার্চ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন শিবপ্রসাদ। আর বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে মোদীর জন্য ভোট চাওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল গত ১৯ এপ্রিল।
সবদিক খতিয়ে দেখার পর কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি এম নাগাপ্রসন্ন এই মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারপতি এই মামলা প্রসঙ্গে যে পর্যবেক্ষণ করেছেন, সেখানে তিনি বলেছেন, 'এই অভিযোগ অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে দায়ের করা হয়েছে।'
একইসঙ্গে, এই ঘটনায় যে পুলিশকর্মীরা তদন্ত করেছেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা করেছেন, তাঁদেরও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন বিচারপতি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, 'এই মামলার তদন্তও বেপোয়াভাবে করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই একটি বেপরোয়া চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।' এরপরই বিচারপতি এই মামলা খারিজ করে দেন।