কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রের বর্তমান এনডিএ সরকারের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য এইচ ডি কুমারস্বামীকে 'কালিয়া কুমারস্বামী' বলে সম্বোধন করে বিতর্কে জড়ালেন কংগ্রেস নেতা তথা কর্ণাটক সরকারের মন্ত্রী জমির আহমেদ খান।
যার জেরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে মাঠে নামেছে কুমারস্বামীর নেতৃত্বাধীন জনতা দল (সেকুলার) ও তাদের জোটসঙ্গী বিজেপি। এহেন বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যের জন্য অবিলম্বে জমির আহমেদ খানের পদত্যাগ দাবি করেছে তারা। ঘটনার জেরে অস্বস্তি বেড়েছে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদেরও।
ঘটনার সূত্রপাত হয় রবিবার। ওই দিন কর্ণাটকের রামনগরে আয়োজিত একটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতা জমির আহমেদ খান। সেই সভার মঞ্চে তিনি বলেন, চান্নাপাটনার কংগ্রেস প্রার্থী সি পি যোগীশ্বরা যে আগে বিজেপিতে ছিলেন, সেটা আসলে তিনি থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন।
খানের দাবি, আর কোনও বিকল্প উপায় না থাকাতেই এর আগে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন যোগীশ্বরা।
পিটিআই সূত্রের খবর, এরপরই খান এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমাদের দলের (কংগ্রেসের) সঙ্গে কিছু মতানৈক্যের জেরে তিনি (সি পি যোগীশ্বরা) নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়তে (অতীতে) বাধ্য হয়েছিলেন। বিজেপি ছাড়া ওঁর কাছে আর কোনও দলে যাওয়ার উপায় ছিল না। তিনি জেডি(এস)-এ যেতে রাজি ছিলেন না। কারণ, 'কালিয়া কুমারস্বামী' বিজেপির থেকেও ভয়ঙ্কর! এবার তিনি (যোগীশ্বরা) আবার ঘরে (কংগ্রেসে) ফিরে এসেছেন।'
প্রসঙ্গত, ওয়াকিবহাল মহলের মতে চান্নাপাটনার আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী যোগীশ্বরার সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছেন কুমারস্বামীর ছেলে নিখিল।
তিনিই ওই আসনে এনডিএ-র প্রার্থী। তাঁকে তাঁর দল জেডি(এস)-এর তরফে উপনির্বাচনে লড়ার টিকিট দেওয়া হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই ভোট মরশুমে খানের এমন বেফাঁস মন্তব্য লুফে নিয়েছে বিজেপি-জেডি(এস) জোট। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে এবং সংবাদমাধ্যমে সরব হওয়ার পাশাপাশি সোশাল মিডিয়াতেও সোচ্চার হয়েছে তারা।
কুমারস্বামীর দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে এবং খানকে নিশানা করে পোস্ট করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, 'কালো বর্ণের মানুষের প্রতি যে অসম্মান ও নেতিবাচক মানসিকতা আপনি প্রকাশ করেছেন, আমজনতাই আপনাকে এর জবাব দেবে।'
এখানেই শেষ নয়। এরপর সরাসরি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বকে নিশানা করেছে জেডি(এস)। তাদের প্রশ্ন, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে, কংগ্রেসেরই মন্ত্রী এইচ সি মহাদেবাপ্পা, সতীশ জারাকিহোলি, প্রিয়াঙ্ক খাড়্গে এবং কে এইচ মুনিয়াপ্পার রং ঠিক কী?
সংশ্লিষ্ট সোশাল মিডিয়া পোস্টে জেডি(এস)-এর তরফে জাতীয় কংগ্রেস, কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, 'কোনও মানুষের চামড়ার রং কালো অথবা সাদা হলে তাতে কী ফারাক হয়?'
এমন বর্ণ বিদ্বেষী মন্তব্য করার জন্য জমির আহমেদ খানকে অবিলম্বে জাতীয় কংগ্রেস, কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস এবং সিদ্দারামাইয়া মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত করারও দাবি তুলেছে জেডি(এস)।
জেডি(এস)-এর জোটসঙ্গী বিজেপিও খানের এই মন্তব্য হাতিয়ার করে কংগ্রেসকেই কার্যত একটি বর্ণবিদ্বেষী রাজনৈতিক দল বলে দেগে দিয়েছে।