ইন্ডিয়া জোট জিতলে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। তার মূল লক্ষ্য 'একনায়কতন্ত্র' থেকে দেশ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। বুধবার এমনটাই মন্তব্য করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
তিনি বলেন, ‘আমার এমন কোনও উদ্দেশ্য নেই। আমরা (আপ) খুব ছোট দল, মাত্র ২২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেজরিওয়াল দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে সব বিরোধী নেতাদের জেলে যেতে হবে এবং নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন তিনি।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে কেজরিওয়াল বলেন, ‘এ ধরনের কোনও আলোচনা হয়নি। এটি একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন। আমরা যখন একসঙ্গে বসব, তখন এ নিয়ে আলোচনা করব।’
ইন্ডিয়া জোটে কোনও প্রধানমন্ত্রীর মুখ না থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কেজরিওয়াল বলেন, ‘এই মুহূর্তে সকলের উদ্বেগ হল যে তারা (বিজেপি) কাউকে ছাড়বে না।’ অর্থাৎ ইন্ডিয়া জোটের আশঙ্কা কাউকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই লাগিয়ে দেওয়া হবে।
দিল্লিতে বিরোধীদের জোটের জয় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, "আম আদমি পার্টি এবং ইন্ডিয়া ব্লকের এতটাই ঢেউ উঠেছে যে আমি অবাক হব না যদি বিধানসভা নির্বাচনের আগের রেকর্ড যেখানে আমরা (আপ) ২০১৫ সালে ৬৭ টি আসন এবং (২০২০ সালে) ৬২ টি আসন জিতেছিলাম, এবার তা ভেঙে যাবে।'
তিনি বলেন, ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেই বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
কেজরিওয়াল আরও বলেন, ইন্ডিয়া ব্লক ৩০০ টির কাছাকাছি আসন পেতে চলেছে।
তিনি বলেন, ‘ইন্ডি জোটই কেন্দ্রে সরকার গঠন করবে। এই জোট একটি ভাল এবং স্থিতিশীল সরকার উপহার দেবে।’
আরও পড়ুন। ওঁরা বলেছিলেন গুরুত্ব পাচ্ছেন না, বিজেপিতেই বা কী পাচ্ছেন?’ দলত্যাগীদের নিয়ে খোঁচা খাড়গের
স্বৈরশাসন নিয়ে কেজরিওয়াল
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, 'এবারের লোকসভা ভোট ছিল বর্তমান স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। তারা ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রকে শেষ করে দেবে।"
আবগারি মদ নীতি সংক্রান্ত আর্থিক তছরুপের মামলায় ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয়, তিনি বলেন, তাঁর গ্রেফতার এবং জেলে সময় কাটানো দিল্লির ভোটারদের কাছে একটি আবেগের বিষয় এবং এই আবেগ বিজেপিকে আঘাত করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একনায়কতন্ত্রের কথা শুনছি এবং লোকেরা বলছে যে তাদের এই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। এই অনুভূতি খুবই শক্তিশালী।’
তাঁর কথায়, একজন 'ভালও মানুষকে' গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভেবে মানুষের মধ্যে 'প্রচণ্ড ক্ষোভ' ছিল। তিনি আরও বলেন, তাঁর মুক্তি 'ঈশ্বরের অলৌকিক ঘটনা'র মতো,'আমি যখন প্রচারে যাই, তখন মানুষের চোখ ভেজা থাকে।'
আরও পড়ুন: বয়স উল্লেখ করে নবীনকে শাহি তোপ, ‘উনি কি মোদীকে ইঙ্গিত করছেন’ কটাক্ষ চিদাম্বরমের
অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের তুলনা
কেজরিওয়াল ভারতকে রাশিয়া ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না এবং যদি নির্বাচন হয়, তাহলেও তা রাশিয়ার মতো হবে। পুতিন হয় পুরো বিরোধী দলকে জেলে পাঠিয়েছেন অথবা শেষ করে দিয়েছেন এবং তারপর নির্বাচন করেছেন এবং ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।’
তিনি পিটিআই নেতা ইমরান খানকে পাকিস্তানে কারাগারে পাঠানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তারাও (বিজেপি) এটা করবে... আম আদমি পার্টির নেতাদের জেলে পাঠাবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলে পাঠাবেন। কেউ বাদ পড়বে না। সবাই জেলে থাকবে এবং তারপর তারা নির্বাচনে জিততে থাকবে।’
বিজেপিকে দোষারোপ
কেজরিওয়াল বলে, বিজেপি তাঁকে জেলে পাঠিয়েছিল এই ভেবে যে এতে তাঁর দল দুর্বল হয়ে পড়বে, কিন্তু বাস্তবে উল্টোটাই ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘ওরা (বিজেপি) ভেবেছিল আমাকে গ্রেফতার করার পর প্রচারে প্রভাব পড়বে, আমাদের দল ভেঙে যাবে, বিধায়করা ভেঙে পড়বে, সরকারের পতন হবে। কিন্তু ঘটল উল্টোটা। আমাদের দল আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আমাদের নেতৃত্ব একটি পরিবারের মতো কাজ করেছে এবং আমাদের কর্মীরা যখন দেখেছেন যে তাদের নেতা কারাগারে রয়েছেন তখন তাঁরা আরও কঠোর পরিশ্রমে উত্সাহিত হয়েছেন।’