তুমুল বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। তা উপেক্ষা করেই বিতর্কিত কেরালা পুলিশ আইন সংশোধনী অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করলেন রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ। মহিলা এবং শিশুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ রুখতে সেই অধ্যাদেশ আনা হয়েছে দাবি করেছে কেরালা সরকার।
নয়া অধ্যাদেশের মাধ্যমে পুলিশ আইনকে আরও কঠোর করা হয়েছে। অধ্যাদেশের ১১৮-এ ধারা অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও মানুষকে হুমকি দেওয়া হয়, অপমান করা হয় বা তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর উদ্দেশে যদি কোনও বিষয়বস্তু পোস্ট বা ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দোষীদের তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। বা কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানাও গুণতে হতে পারে। সংশোধিত আইনের প্রস্তাব অনুযায়ী, যে কোনও ব্যক্তি দোষীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পারবেন বা পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও মামলা দায়ের করতে পারবে। মানহানি মামলার মতো বিধান থাকছে না সেখানে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অধ্যাদেশে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে গণমাধ্যমও আছে। ফলে তা অপব্যবহারের সবরকমের আশঙ্কা আছে। আইনি বিশেষজ্ঞ এবং সাইবারকর্মী জিয়াস জামাল বলেন, ‘এটা (অধ্যাদেশ) যত না ভালো করবে, তার থেকে বেশি খারাপ করবে। কোনও ব্লগার, অনলাইন সংবাদমাধ্যম কর্মী বা সাইবারকর্মী কোনও বিষয়ের উপর লিখতে পারবেন না। প্রতিহিংসার জন্য এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। উদ্দেশ্য ভালো। কিন্তু সেটির প্রণয়ন প্রক্রিয়া ভয়াবহ হবে।’ একই অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা।
যদিও সেই বিরোধিতার মুখে বাম সরকারের সাফাই, আপাতত যে আইন আছে, তা সোশ্যাল মিডিয়ার এরকম অপরাধের জন্য উপযুক্ত নয়। পাশাপাশি দাবি করা হয, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণামূলক মন্তব্য এবং সাইবার বুলিং রুখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত মে'তে কেরালার মুখ্যসচিব এবং ডিজিপিকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আইনমন্ত্রী এ কে বালান বলেন, ‘এক্ষেত্রে যে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তা অমূলক। সাইবার হানা আটকানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। যা ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে বড়সড় ঝুঁকির হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
তাতে অবশ্য আশ্বস্ত নন বিরোধীরা। বিরোধী নেতা রমেশ চেন্নাইথালা বলেন, ‘মহিলা এবং শিশুদের যে সাইবার বুলিং হচ্ছে, তা যে কোনও মূল্যে রুখতে হবে। কিন্তু সাইবার অপরাধ মোকাবিলার আড়ালে সাংবাদিকদের নিশানা করতে পারে সরকার। যাঁরা (সরকারের) অনেক অপকর্ম ফাঁস করে দিচ্ছেন। অধ্যাদেশের কয়েকটি শব্দে আমাদের ভয় আরও বেড়েছে।’