হোস্টেল কোনও জেল নয় এবং ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে সব বিধিনিষেধ সমান ভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত। এমনই এক পর্যবেক্ষণ দিল কেরল হাই কোর্ট। রাজ্য সরকারের নয়া নির্দেশিকা কার্যকর করে কেরলের সব মেডিক্যাল কলেজকে মেয়েদের 'কার্ফু' শিথিল করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আদালত আরও বলেছে যে মহিলাদের উপর 'বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না কারণ তারাও পুরুষদের মতো সাংবিধানিক অধিকারের অধিকারী।' বিচারপতি দেবান রামচন্দ্রনের এজলাসে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় গত বৃহস্পতিবার। সেখানেই মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ শিথিল করার নির্দেশ দেন বিচারপতি রামচন্দ্রন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তির জারি করে বলা হয় যে সব ছাত্রীকে রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে হোস্টেলে ফিরতে হবে। এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধেই সেই কলেজের ছাত্রীরা উচ্চ আদালতে একটা মামলা দায়ের করেন। আবেদনকারী ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, এই 'কার্ফু' প্রযোজ্য নয়। এই আবহে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সরকারের কাছে জবাব চায় উচ্চ আদালত। এরপরই পুরোনো বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে ৬ ডিসেম্বর নতুন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় সরকারের তরফে। নয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বেঁধে দেওয়া সময়ের পরে এলেও পড়ুয়াদের হোস্টেলে ঢুকতে দেওয়া হবে। তবে শর্তসাপেক্ষে সেই অনুমতি মিলবে। রাজ্য মহিলা কমিশন আদালতকে জানিয়েছে যে নতুন আদেশ লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করেছে। আদালত এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সমস্ত রাজ্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের এটি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে আদালতকে জানানো হয়েছিল যে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের দাবি মেনেই এই বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। এই আবহে বিচারপতি রামচন্দ্রন নিজের পর্যবেক্ষণে বলেন, 'ছাত্রীদেরও সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, সম্ভবত ছেলেদের চেয়েও বেশি। তাদের ওপর এভাবে বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না। হোস্টেল কারাগার নয়। প্রয়োজনে পুরুষদের তালাবন্ধ করুন, কারণ তারা সমস্যা তৈরি করে। নারীদের স্বাধীনভাবে চলতে দিন।' আদালতের তরফে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, হোস্টেলের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। তবে ছাত্রীদের ওপর এভাবে কার্ফু আরোপ করবেন না। এতে কোনও লাভ হবে না। এর আগে কেরল হেলথ সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিতর্কিত হলফনামা জমা দিয়ে বলা হয়েছিল, 'মেয়েদের ১৮ বছরে সাবলম্বী বলে ধরা উচিত নয়। মেয়েদের ২৫ বছর বয়সে সাবলম্বী বলে ধরা উচিত।'