শুধুমাত্র পোশাক দেখে কোনও মহিলার সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া, কিংবা তাঁর ভদ্রতা যাচাই করা - কোনও সভ্য সমাজে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই ধরনের মানসিকতা আদতে কট্টর পিতৃতান্ত্রিক ভাবনার ফসল। একটি মামলা প্রসঙ্গে এমন মতামত প্রকাশ করল কেরালা হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্ট মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি দেবান রামচন্দ্রণ এবং বিচারপতি এম বি স্নেহলতার বেঞ্চে। সংশ্লিষ্ট মামলায়, এর আগে পরিবার আদালতের তরফে রায় দেওয়া হয়েছিল, মামলাকারী মহিলার দুই সন্তানেরই কাস্টডি পাবেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী। কারণ, পরিবার আদালতের মনে হয়েছিল, ওই মহিলা তাঁর বাচ্চাদের খেয়াল রাখার যোগ্য নন। কেরালা হাইকোর্ট পরিবার আদালতের সেই খারিজ করে দিয়েছে।
ওই মহিলার প্রাক্তন স্বামীর অভিযোগ ছিল, তাঁর স্ত্রীর চরিত্র ভালো নয়। কারণ, তিনি খোলামেলা পোশাক পরেন, ডেটিং অ্যাপে নিজের ছবি পোস্ট করেন, পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, স্বামীর প্রতি অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন এবং সর্বোপরি, তিনি নাকি একজন হ্যাকারকে নিয়োগ করেছেন, প্রাক্তন স্বামী কম্পিউটার হ্যাক করার জন্য!
এর ভিত্তিতে পরিবার আদালতও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে ওই মহিলা চরিত্রহীন এবং তিনি তাঁর বাচ্চাদের খেয়াল রাখার যোগ্য নন। তাই বাচ্চাদের কাস্টডি তাঁর প্রাক্তন স্বামীকে দেওয়া হয়।
পরিবার আদালতের এই অবস্থানে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালতের বক্তব্য, সংবিধান প্রণয়নের ৭৫তম বর্ষে পদার্পণ করে এমন ঘটনার সাক্ষী হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। হাইকোর্ট দু'টি বাচ্চারই কাস্টডি তাদের মাকে দেয়।
এই মামলায় কেরালা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে আরও বলে, আজও সমাজের একটা বড় অংশের উপর কট্টর পিতৃতন্ত্র কায়েম হয়ে রয়েছে। যার জন্য একেবারে ছোট্ট বয়সে স্কুলে পড়ার সময় থেকেই মেয়েদের উপর 'অলিখিত পোশাক নির্দেশিকা' চাপিয়ে দেওয়া হয়।
একজন মহিলা যে পোশাকই পড়ুন না কেন, বা যেভাবেই নিজের জীবনযাপন করুন না কেন, তার ভিত্তিতে তাঁকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কারও নেই। একজন মানুষের পোশাক তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ এবং তাঁর ব্যাক্তিসত্ত্বা ও স্বাতন্ত্রের প্রতীক।
প্রসঙ্গত, এই মামলায় সংশ্লিষ্ট মহিলা তাঁর ডিভোর্সের পর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে তাঁর এই মুক্তি উদযাপন করেছিলেন। তাঁর সেই সেলিব্রেশনের ছবিই আদালতে তাঁর উশৃঙ্খল জীবন যাপনের প্রমাণ হিসাবে দাখিল করেছিলেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী!
ওই ব্যক্তির এহেন আচরণকেও অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ধিক্কার জানিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের বক্তব্য হল, একজন মহিলা শুধুমাত্র বিবাহিত হলেই খুশি থাকবেন এবং ডিভোর্সের পর তাঁকে খুব দুঃখী থাকতে হবে, এমন অদ্ভূত ভাবনার কোনও যুক্তি নেই।
হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছে, কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত মতামত কখনই আদালতের কোনও রায়ে প্রতিফলিত হতে পারে না।