ওড়িশায় থানার ভিতরেই ভারতীয় সেনা অফিসার এবং তাঁর বাগদত্তাকে মারধরের ঘটনায় অফিসার ইনচার্জ সহ ৫ জন পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করা হল। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভুবনেশ্বরের ভরতপুর থানায় সেনা অফিসার এবং বাগদত্তাকে মারধর ও যৌন নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওড়িশা হাইকোর্টের নির্দেশে নির্যাতিতা জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়ার পরেই জেলের ভেতরে কীভাবে তাকে অত্যাচার করা হয়েছিল সেই কথা বর্ণনা করেন নির্যাতিতা।
আরও পড়ুন: পুলিশের মারে বিজেপি প্রার্থীর ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগ, ক্লোজ তিন পুলিশকর্মী
জানা গিয়েছে, পেশায় আইনজীবী ওই মহিলা একটি রেস্তোরাঁ চালান। তিনি অভিযোগ করেন, থানার ভিতরে ইন্সপেক্টর ইনচার্জ সহ আরও চারজন পুলিশ কর্মী তাঁকে লাথি মারে, টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান।তিনি বলেন, ‘ইন্সপেক্টর ইনচার্জ বর্বরতা সব সীমা অতিক্রম করেছেন। তিনি আমাকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন।’ উল্লেখ্য, একজন মহিলা পুলিশ অফিসারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল যুগলের বিরুদ্ধে। যদিও পুলিশ কর্মীরা নির্যাতিতা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এই অভিযোগ ওঠার পরেই অপরাধ শাখা ঘটনার তদন্ত করছে।
নির্যাতিতা অভিযোগ করেন, নিজেদের বাঁচাতে পুলিশ তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছে। মহিলা জানান, সেনা অফিসার এবং তিনি গত ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী তাদের দিকে তেড়ে আসে এবং পথ আটকে মারধর করে। তখন তারা ভরতপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সাহায্য পাওয়া তো দূরের কথা উল্টে পুলিশ তাদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করে। নির্যাতিতা দাবি করেছেন, যে তিনি যখন পুলিশকে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের জন্য অনুরোধ করেন তখন তারা তাঁর এবং সেনা অফিসারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে।
এদিকে, নির্যাতিতা মহিলা পুলিশ কর্মীকে হেনস্থা করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দুই মহিলা পুলিশ আমাকে চুল ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে গিয়েছিল। আমি পাল্টা বাঁচার চেষ্টা করি। আত্মরক্ষার জন্য, আমি একজন মহিলা অফিসারের হাত কামড় দিয়েছিলাম।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, যে পুলিশ তাঁর হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে তাঁকে একটি ঘরে ফেলে দেয়। সেখানে একজন পুরুষ অফিসার তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘ একজন পুরুষ পুলিশ অফিসার এসে আমার অন্তর্বাস খুলে একটানা আমার বুকে লাথি মারতে থাকে।’
পরে সকাল ৬টা নাগাদ ইন্সপেক্টর ইনচার্জ পৌঁছন। তিনিও চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। নির্যাতিতা বলেন, ‘ইন্সপেক্টর ইনচার্জ আমাকে ধাক্কা দেয়, হুমকি দেয় এবং অশ্লীল ইঙ্গিত করে। তিনি নিজের প্যান্টের বোতাম খুলে যৌনাঙ্গ দেখিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাওয়ার কথা জানান। তিনি আমাকে শ্লীলতাহানিও করেছেন।’
অন্যদিকে, সেনা অফিসার জানান, তাঁকে ভোর ৩টে থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লক আপে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়। তাঁর অভিযোগ, সকাল ৬টা নাগাদ থানায় পৌঁছন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ। তিনি যখন পুলিশ অফিসারের কাছে গ্রেফতারের কারণ জানতে চান তখন তাঁকেও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ অফিসার তাঁর বাগদত্তাকে হয়রানি ও শ্লীলতাহানি করেছেন। তিনি ৩০ মিনিট ধরে বাগদত্তার চিৎকার শুনতে পেয়েছিলেন।