নাহিদ ইসলাম। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক। তিনি জানিয়েছেন, আমরা চাই না আওয়ামি লিগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে নিজের দল এনসিপি প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এনসিপি একটি মধ্য়পন্থী রাজনৈতিক দল।আমরা এই আদর্শ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হল নতুন কণ্ঠস্বর বিশেষ করে তরুণ ও সব সামাজিক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য় জায়গা তৈরি করা। যারা বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছে।
জামায়তে ইসলামের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে নাহিদ জানিয়েছেন, এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক দল। আমাদের অ্য়াজেন্ডাও আলাদা। আমাদের মধ্য়ে কোনও সংযোগ নেই।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে একটি স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিশ্চিত করা,একটি গণপরিষদ গঠন করা। তাই নির্বাচন আমাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয়। বর্তমানে নির্বাচনের জন্য় আমরা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারন করছি না। জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।
দলের( আওয়ামি লিগ) ভেতর যারা অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। খবর প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে।
তাঁর সামগ্রিক বক্তব্য়ের মধ্যে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল আমরা চাই না আওয়ামি লিগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। অপর বিষয়টি হল নির্বাচনের জন্য় আমরা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারন করছি না।
কিন্তু যে নাহিদ তাঁর দল গঠনের পরে প্রথম বক্তব্য বলেছিলেন গণতন্ত্রের কথা সেই নাহিদের মুখে এ কোন কথা! প্রশ্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
সম্প্রতি নতুন দল তৈরি করেছেন নাহিদ ইসলাম। সেই দলের আত্মপ্রকাশের দিনে বক্তব্য রেখেছিলেন নাহিদ। সেই সময় তিনি জানিয়েছিলেন,
'আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়; কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে— এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি। বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে। জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতা বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে; কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী–ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।