করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে প্রয়াত হলেন কার্নুলের চিকিৎসক কে এম ইসমাইল হুসেন। লোকমুখে তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন ‘২ টাকার ডাক্তার’ নামে।
গত কয়েক সপ্তাহ আগে আচমকা চেন্বারে বসা বন্ধ করে দেন ডাক্তার হুসেন। শোনা যায়, সকাল থেকে তীব্র শ্বাসকষ্টে তিনি ভুগছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কার্নুল সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। দুই দিন পরে সেখানেই তিনি মারা যান। তাঁর নমুনায় করোনা উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
সরাসরি কোনও করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে তিনি এসেছিলেন কি না, তা নিয়ে এখনও ধন্দে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তবে প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে রাত একটা-দুটো পর্যন্ত অসংখ্য রোগী দেখার ফাঁকে কখনও তিনি সংক্রামিত হয়ে থাকতে পারেন, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: ভবরঙ্গের দেশে পাড়ি দিলেন 'রঙ্গকর্মী' ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়
গরিবের ডাক্তার হিসেবে কার্নুলে সকলে একডাকে চিনতেন ইসমাইল হুসেনকে। কার্নুল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও এমডি পাশ করার পরে ওই হাসপাতালে দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করেন তিনি। প্রায় ২৫ বছর আগে অবসরগ্রহণের পরে শুরু করেন প্রাইভেট প্র্যাক্টিস। কে এম হসপিটাল নামে নিজের নার্সিংহোমও খোলেন।
বরাবরই দরিদ্র রোগীর চিকিৎসায় নিবেদিতপ্রাণ ইসমাইল হুসেন আশি ও নব্বইয়ের শতকে তাঁর ফি হিসেবে নিতেন ২ টাকা মাত্র। এর পরেও সেই ফি বেড়ে কখনও ২০ টাকার উপরে ওঠেনি। নিজে হাতে ফি-এর টাকা নিতেন না। টেবিলে রাখা কার্ডবোর্ডের বাক্সয় রোগীরা নিজেই টাকা-পয়সা জমা দিতেন, প্রয়োজনে টাকা ভাঙিয়েও নিতেন তাঁরাই।
শুধুমাত্র কার্নুল বা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল বহু দূরের নানান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও। দরিদ্রের বিশ্বাসে তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ ঈশ্বর। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁৎ বাড়ির সামনে রোগীদের লম্বা লাইন পড়ত।
মাত্র কয়েক মাস আগে ৭৬ তম জন্মদিনও রোগী দেখেই কাটিয়েছিলেন কার্নুলের এই ধন্বন্তরী। মৃত্যুর দুই দিন আগেও আর্তের সেবাতেই নিজেকে তিনি নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ কার্নুল ও সংলগ্ন অঞ্চল।