বুধবার কুয়েতের দক্ষিণাঞ্চলে বিদেশি শ্রমিকদের আবাসিক একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। কুয়েতি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের আবাসস্থল আল-মাঙ্গাফ ভবনে আগুন লাগার খবর ভোর সাড়ে ৪টায় আল-আহমাদি প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। বাসিন্দারা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বেশিরভাগ বাসিন্দার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এই অগ্নিকাণ্ডে। এদিকে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা ৪৯। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪২ জন ভারতীয় বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া মিসর, নেপাল, পাকিস্তান ও ফিলিপিন্সের নাগরিকদেরও মৃত্যু হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ও নির্মাণ সংস্থা এনবিটিসির ১৯৫ জন শ্রমিক এই ভবনটিতে থাকত। এনবিটিসির আংশিক মালিকানা রয়েছে এক ভারতীয়র কাছে। সংস্থার শ্রমিকদের রাখার জন্যেই এই ভবনটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ভারতের কেরল, তামিলনাড়ু এবং উত্তরের বেশ কিছু রাজ্য থেকে শ্রমিক এনে এখানে রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। মৃতদের অধিকাংশই অবশ্য কেরলের। নিহতদের বয়স ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে এই অগ্নিকাণ্ডে ৫০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। কুয়েতের আমির শেখ মেশাল আল-আহমেদ আল-জাবের আল-সাবাহ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে একটি বার্তা দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করতে এবং দোষীদের চিহ্নিত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে এই ঘটনার পর্যালোচনা করতে গতকালই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রত্যেক মৃত ভারতীয়ের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কুয়েতের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ ভারতীয়। সেই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সেখানে যত কর্মী রয়েছেন, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ভারতীয়। সেই সংখ্যাটা প্রায় ৯ লক্ষের মতো। এই আবহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনারকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যাতে বাংলা থেকে যাওয়া কোনও শ্রমিক এই দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন কি না, তা দেখতে। এবং কেউ যদি হতাহত হয়ে থাকে, তাহলে তাকে বা তার পরিবারপকে পূর্ণ সাহায্য করতে।
এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মমতা লেখেন, 'এই মুহূর্তে রাজ্যের যে সমস্ত বাসিন্দারা কুয়েতে রয়েছে তাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে রাজ্য সরকার বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে তিনি বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই পরিস্থিতিতে কুয়েতে থাকা ভারতীয়দের যদি কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হয় তার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। কুয়েতে থাকা বাংলার নাগরিকদের পাশেই রয়েছে রাজ্য সরকার।'