হাসিনা সরকারের উৎখাতের পর আজকের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থনে কোনও কথা বললেই যে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসবে, আবারও একবার তার প্রমাণ পাওয়া গেল। এমনকী, অভিযুক্ত যদি দাবিও করেন, তিনি এমন কিছু করেননি, কিংবা কোনও চক্রান্তের শিকার হয়েছেন, তাহলেও আগে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে, তারপর তদন্ত, তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে!
বুধবার (২৬ মার্চ, ২০২৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে এমনই শাস্তির খাঁড়া নেমে এল বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা কায়ছানের উপর। একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হতেই তাঁকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সাময়িক 'অব্যাহতি' দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হল।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এদিন সকালেই সিরাজুমের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ওই পোস্ট করা হয়। তাতে লেখা হয় - 'পৃথিবীর বুকে বাংলার নাম আজ উজ্জ্বল, লড়াইয়ের ইতিহাসে লেখা হল অনন্য মহিমা, সেখানে বীরত্বের গান বাজে নিঃশব্দে, শাসকগোষ্ঠীর শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির সীমানা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায়।
সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন-বাংলাদেশ স্বাধীন! এরপর শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়, কিন্তু এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ২৬ মার্চেই। তাই এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সংগ্রামের চেতনা এবং আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল।
আমাদের স্বপ্ন একটি দুর্নীতিমুক্ত, প্রযুক্তিনির্ভর, উন্নত বাংলাদেশ। যেখানে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে, শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে, অর্থনীতি হবে স্বনির্ভর, এবং সর্বোপরি-গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার থাকবে সুসংহত।
অর্জিত স্বাধীনতা কেবল একটি ঘটনা নয়, জীবনধারার প্রাত্যহিকতায় মুক্তির আবেশ দায়িত্ব এদেশের প্রতিটি সন্তানের কাঁধে, আগামী দিনে গড়তে হবে সোনার বাংলাদেশ। মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা...'
এই পোস্ট বাংলাদেশের নেট নাগরিকদের চোখে পড়তেই তাঁদের একাংশ ক্ষেপে যান। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-র তরফে এর প্রতিবাদ করা হয়। এমনকী, এদিন ওই সরকারি আধিকারিক স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান উপলক্ষে সরাইল অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত কুচকাওয়াজে গেলে সেখানেও বিএনপি-র বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয় তাঁকে।
যদিও সিরাজুম মুনিরা কায়ছান দাবি করেন, কেউ বা কারা তাঁর অ্যকাউন্ট হ্যাক করেছিল। কিংবা, তাঁর অ্য়াকাউন্টের পাসওয়ার্ড রয়েছে, এমন কেউই অনৈতিকভাবে ওই ফেসবুক পোস্ট করেছিল। যে পোস্ট নিয়ে বিতর্ক ছড়ায়, পরে সেটি মুছেও দেন ওই সরকারি আধিকারিক। আত্মপক্ষ সমর্থন করে নতুন একটি পোস্ট করেন। কিন্তু, তাতে 'চিঁড়ে ভেজেনি'। বিএনপি উলটে দাবি করে, ওই আধিকারিক আসলে 'নাটক' করছেন।
অন্যদিকে, সরাইল উপজেলা কার্যনির্বাহী আধিকারিক (ইউএনও) মহম্মদ মোশারফ হোসেন একটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমকে এই প্রসঙ্গে জানান, 'এসি ল্যান্ড দাবি করেছেন লেখাটি তিনি লিখেননি। এই আইডি-র পাসওয়ার্ড অনেকের কাছে ছিল। জেলা প্রশাসক মহোদয় বলেছেন, তাঁকে আপাতত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছুটিতে পাঠাতে। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
প্রসঙ্গত, এর আগে শেখ মুজিবুরের নামে দোয়া করার চিঠি পাঠানোর 'অপরাধে' এক মহিলা আধিকারিককে সাসপেন্ড হতে হয় এবং অন্য এক মহিলা আমলার পদ ও দফতর বদলে দেওয়া হয়! যদিও সেই ঘটনাটিও আপাতত তদন্তসাপেক্ষ!