ললিত মোদিকে ইস্যু করা ভানুয়াতু পাসপোর্ট বাতিল করতে নাগরিকত্ব কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী জোথাম নাপাত। এক বিবৃতিতে নাপাত বলেন, 'আমি নাগরিকত্ব কমিশনকে অবিলম্বে ললিত মোদীর ভানুয়াতু পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। তাঁর পাসপোর্টের আবেদনের সময় ইন্টারপোলের স্ক্রিনিংসহ সমস্ত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়েছিল। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক দোষী সাব্যস্ত হয়নি। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় আমি জেনেছি যে দু'বার ললিত মোদীর বিরুদ্ধে সতর্কতা নোটিশ জারি করার জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে তা বিচারিক তথ্যপ্রমাণের অভাবে খারিজ করা হয়েছিল। এ ধরনের কোনও সতর্কতা থাকলে মোদির নাগরিকত্বের আবেদন আপনাআপনি বাতিল হয়ে যেত।' (আরও পড়ুন: খুশির রাতে ধুন্ধুমার, ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় উদযাপনের মিছিলে ছোড়া হল পাথর)
আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর সমর্থকদের ওপর পুলিশি লাঠিচার্জের অভিযোগ হায়দরাবাদে
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন যে ভানুয়াতু পাসপোর্ট রাখা একটি বিশেষাধিকার এবং আবেদনকারীদের অবশ্যই নাগরিকত্বের বৈধ কারণ সরবরাহ করতে হবে। এই আবহে তিনি আরও বলেন, 'সাম্প্রতিক যে তথ্য সামনে এসেছে, তা থেকে স্পষ্ট যে প্রত্যর্পণ এড়াতেই ললিত মোদী এখানকার নাগরিকত্ব নিতে চেয়েছিলেন।' উল্লেখ্য, একদিন আগেই খবর পাওয়া যায় যে ভারতীয় পাসপোর্ট সারেন্ডার করার জন্যে আবদেন করেছিলেন ললিত মোদী। আইপিএলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ভানুয়াতুর নাগরিক হয়েছেন। তবে নাগরিকত্ব লাভ হতে না হতেই সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ললিত মোদীর পাসপোর্ট বাতিল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিপুল অর্থ থাকলে প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপপুঞ্জের নাগরিক হওয়া যায়। সেখানে কর সংক্রান্ত বিশাল সুবিধা আছে। সেখানে কর্পোরেট ট্যাক্স নেই বলে খবর। ভানুয়াতুতে যদি কারোর ব্যবসা নথিভুক্ত থাকে তবে তিনি যদি দেশে, বিদেশে ব্যবসা করেন তবে তাঁকে কোনও কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয় না। আয়করও জমা দিতে হয় না সেই দেশের নাগরিকদের। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে বিমানে ঘণ্টা চারেকের মধ্যে যাওয়া যায় এই দ্বীপে। ২০২৩ সালের হিসাব বলছে, এখানকার জনসংখ্যা ৩৩৫,৯০৮। ভানুয়াতুর রাজস্বের ৩০ শতাংশ আসে নাগরিকত্ব বিক্রির মাধ্যমে। ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব পাওয়ার পদ্ধতি বেশ সহজ সরল। অত্যন্ত কম নথিপত্র লাগে সেখানে। সেই ফাঁক গলেই ললিত মোদী সেই দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেছিলেন। তবে এরই মধ্যে তাঁর ভানুয়াতুর পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ললিত মোদীর মাথা থেকেই বেরিয়েছিল আইপিএল-এর চিন্তা। পরে তা বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন আইপিএল-এর প্রথম কমিশনার। পরে আর্থিক তছরুপ মামলায় অভিযুক্ত হন ললিত মোদী। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে বিগত কয়েক বছর ধরে লন্ডনেই থাকেন তিনি। সেখান থেকেই ব্যবসা সামলান। বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল শাসকদল বিজেপি। ২০১০ সালে ব্রিটেনে চলে গিয়েছিলেন ললিত মোদী। রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি বর্তমানে লন্ডনের স্লোয়ান স্ট্রিটে একটি বিলাসবহুল বাংলোতে থাকেন। তাঁর মোট সম্পদ আনুমানিক প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। ইনস্টাগ্রামে প্রায়শই বিভিন্ন বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ, দামি সুপারকার, ব্যক্তিগত বিমানে যাত্রার ছবি শেয়ার করেন ললিত মোদী ও তাঁর পরিবার।