বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জুলাই-অগস্ট আন্দোলনের পর থেকেই ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং হানাহানির অভিযোগ লাগাতার বাড়ছে। সেই ঘটনায় সর্বশেষ সংযোজনের বিষয়টি এবার সামনে এল।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের একটি বাউল গোষ্ঠী, যাঁরা মূলত ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সহনশীলতার প্রচারক - লালন ফকিরের অনুগামী, তাঁরা তাঁদের একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হলেন। কারণ, তাঁরা যাতে ওই অনুষ্ঠান না করেন, সেই বিষয়ে হুমকি দিয়েছিল উগ্র ইসলামপন্থীরা।
নানা মহলের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার পর থেকেই বাংলাদেশজুড়ে চরমপন্থীদের দাপাদাপি শুরু হয়েছে। যারা হাসিনার আমলে সেভাবে সামনে আসারই সাহস করেনি, তারাই এখন বেপরোয়াভাবে অন্যদের হুমকি, হুঁশিয়ারি দিচ্ছে।
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার ঠিক পরই বেশ কিছুদিন ধরে হিন্দু-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর উগ্র ইসলামপন্থীরা অত্যাচার চালায় বলে নানা মহলে অভিযোগ তোলা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন এই ধরনের হামলার প্রতিবাদে সরব হয়।
একইসঙ্গে, হাসিনার অনুগামী, তাঁর দল - আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের উপরেও নানা সময় আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে। এমনকী, ইসলামের কট্টর সমর্থকদের হাতে সুফি মুসলমানদের মাজারগুলি পর্যন্ত আক্রান্ত হয় বলে সংশ্লিষ্ট নানা মহলের দাবি।
যে লালন ফকিরকে দুই পারের বাঙালিই শ্রদ্ধা করে, তাঁরও অনুগামীরা ইদানীংকালে বাংলাদেশের চরমপন্থী মুসলিমদের হাতে আক্রান্ত হন।
এই লালন ফকিরের প্রত্যেকটি গান আজও সমাজের সকলস্তরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা দেয়। তাঁর অনুগামীরাই চলতি মাসের একেবারে শেষের দিকে দু'দিনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। যা লালন মেলা হিসাবে সুপরিচিত।
গত বছরও এই মেলায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই মেলায় মূলত লালন ফকিরের ভাবধারা ও জীবন দর্শন প্রচার করা হয়। যা নির্দিষ্ট কোনও ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত নয়। বরং, তা অনেকাংশেই হিন্দুত্ব ও সুফিবাদের এক অনন্য মেলবন্ধন। কিন্তু, কট্টর মুসলিমদের এই মিলমিশ একেবারেই নাপসন্দ।
নারায়ণগঞ্জের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মহম্মদ মেহমুদুল হক এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, গন্ডগোলের আশঙ্কায় শহরের প্রশাসনই এই মেলার অনুমতি দেয়নি। কারণ, তাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
মেলার আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম শাহ জালাল জানিয়েছেন, এই প্রথমবার এভাবে তাঁদের মেলা বন্ধ করতে হল।
এই মেলা যাতে কোনওভাবেই আয়োজন করতে না দেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়ে চলতি মাসের প্রথম দিকেই একটি মিছিল করেছিল বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠনের একটি জোট।
সেই জোটের সংশ্লিষ্ট কমিটির নেতা আবদুল আওয়াল বলেন, 'প্রকৃত ইসলামের বিরোধিতা করে, এমন কোনও কর্মসূচি আমরা হতে দিতে পারি না। উৎসবের নামে ওরা আসলে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। মেয়েরা নাচছে, গাইছে, জুয়া খেলছে, তামাক খাচ্ছে!'
কট্টর ইসলামপন্থীরা অনেকেই বাউল সাধকদের 'বিধর্মী' বলে বিশ্বাস করে এবং তাদের কাছে বাউলদের সমস্ত আচরণই নাকি 'ইসলামবিরোধী'!