২০০৮ সালের ২৬ নবেম্বর আজমল কসাবদের হামলায় কেঁপে উঠেছিল গোটা মুম্বই শহর। পাক জঙ্গিদের তাণ্ডবে কেক ঘণ্টায় ১৬০ জনের বেশি মারা গিয়েছিলেন। সেই হামলার জন্য পাক জঙ্গিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিল হাফিজ আবদুল সালাম ভুট্টাভি। এহেন ভুট্টাভির মৃত্যু হল পাকিস্তানি জেলে। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের দায়ে পকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের একটি জেলে ছিল ভুট্টাভি। সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে। ভুট্টাভির ঘনিষ্ঠ সহযোগী জানিয়েছে, গত ২৯ মে বুকে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করে লস্কর জঙ্গি নেতা। এরপরই জেল কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। জানানো হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তার। মৃত্যুকালে এই জঙ্গির বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। লাহোর থেকে ৬০ কিমি দূরে শেখুপুরা জেলা কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকে।
উল্লেখ্য, মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাজিফ সইদের ডেপুটি ছিল এই ভুট্টাভি। দুই দফায় লস্কর প্রধানের দায়িত্বও সামলেছে সে। রাষ্ট্রসংঘের নিষিদ্ধ জঙ্গিদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। লস্করের পাশাপাশি হাফিজ সইদের জামাত-উদ-দওয়ার সঙ্গেও যুক্ত ছিল ভুট্টাভি। সন্ত্রাসবাদে মদত এবং অর্থায়নের মামলায় গত ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকেই জেলে ছিল ভুট্টাভি। পঞ্জাবের মুরিদকে-তে লস্করের সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করেছিল এই ভুট্টাভি। মৃত্যুর পর সেই লস্কর সদর দফতরেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পাক প্রশাসনের নিরাপত্তায় সেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। জঙ্গি সংগঠনের বহু সমর্থক এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের এক সরকারি আধিকারিক সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন যে লাখপত জেলে থাকা হাফিজ সাইদ শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। তবে সরকার তাকে ভুট্টাভির শেষযাত্রায় যোগ দেওয়ার অনুমোদন দেয়নি। উল্লেখ্য, হাফিজ সইদও খাতায় কলমে ২০১৯ সাল থেকে জেলে রয়েছে। এদিকে ২০২০ সালে ভুট্টাভিকে ১৬ বছরের জন্য কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল লাহোরের একটি জঙ্গিদমন আদালত। এর আগে ২০১১ সাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল ভুট্টাভিকে। পরে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের 'আইএসআইএল এবং আল কায়দা কমিটি' নিষিদ্ধ জঙ্গিদের তালিকায় ভুট্টাভির নাম অন্তর্ভুক্ত করে। ২০১২ সালের মার্চ থেকে রাষ্ট্রসংঘের খাতায় নিষিদ্ধ জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত ভুট্টাভি। জানা গিয়েছে, ২০০২ এবং ২০০৮ সালে হাফিজ সাইদকে জখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার জঙ্গি সংগঠনের যাবতীয় কাজকর্ম ভুট্টাভি দেখাশোনা করছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বইয়ে হামলার জন্য জঙ্গিদের এই ভুট্টাভি তৈরি করেছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে। এদিকে এহেন জঙ্গি নেতার শেষকৃত্যে কীভাবে পাকিস্তানি প্রশাসন নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জন্ম দিয়েছে বিতর্ক।