ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে এবার সামনে এল এক বড় আপডেট। কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রের তরফে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছিল যে এই আইন নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে আইন কমিশন। এই আবহে জানা গিয়েছে, এই আইন বহাল রাখার পক্ষেই সওয়াল করেছে কমিশন। কমিশনের যুক্তি, এই আইন খারিজ করে দিলে দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বড় হুমকির মুখে পড়বে। এই আবহে আইনে কিছু বদলেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এই বিধানটির ব্যাখ্যা এবং ব্যবহারে আরও স্পষ্টতা আনতে ১২৪এ ধারায় সংশোধন আনতে বলেছে কমিশন। এদিকে এই আইনে শাস্তির বিধান আরও কঠোর করার দাবি করেছে কমিশন।
কী বলেছে আইন কমিশন? কর্ণাটক হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তির মতে, ১৯৬২ সলে কেদাননাথ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বদল আনা উচিত এই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে। সেই মামলায় শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, কারও মধ্যে সহিংসতায় প্ররোরচনা দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেই তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের আইনে মামলা রুজু করা যাবে। তবে বাক-স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না এই আইনকে। এদিকে এই আইনের অধীনে সর্বোচ্চ সাজা তিনবছরের কারাদণ্ড থেকে ৭ বছরের করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারা বা রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় শীর্ষ আদালতে। উল্লেখ্য, বর্তমানে এই আইনটি স্থগিত রয়েছে। এই আইনের অধীনে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে এই আইনটি এখনও বাতিল হয়নি। এই আবহে গত মে মাসে আদালতে কেন্দ্র জানায় যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারাটিকে নতুন করে লিখবে কেন্দ্র। এর আগে গতবছর নভেম্বর মাসে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি দাবি করেছিলেন, সংসদের বাজেট অধিবেশনে এই নিয়ে সরকার কোনও পদক্ষেপ করতে পারে। তবে তা হয়নি। যদিও গত মে মাসে তিনি শীর্ষ আদালতে জানান, এই আইন সংশোধন সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এরই মাঝে এবার সামনে এল এই আইন নিয়ে আইন কমিশনের সুপারিশ।
এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, যতদিন ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারার বৈধতা নিয়ে পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া চলছে ততদিন যেন রাজ্য বা কেন্দ্র এই আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা রুজু না করে। সেইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, যাঁরা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলবন্দি আছেন বা মামলা চলছে, তাঁরা নিজেদের বক্তব্য নিয়ে ট্রায়াল কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্য কোনও ধারায় মামলা রুজু থাকলে, তার প্রেক্ষিতে বিচার ব্যবস্থা পদক্ষেপ করবে এবং সাজা শোনাবে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, যাঁরা ইতিমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে জেলবন্দি আছেন, তাঁরা শুধু সেই ধারা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যেই আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন। এই মর্মে সব রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।