গোয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য রেডিয়োর মাধ্যমে নিয়মিত বার্তা দিতেন। পরে লিফলেট বিলি করে গোয়াবাসীকে মুক্তির কথা ঘোষণা করেছিলেন। শতায়ু সেই স্বাধীনতা সংগ্রামী লিবিয়া লোবো সারদেশাই পদ্মশ্রী পুরস্কার পাচ্ছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত তাঁকে ‘সাহস ও সংকল্পের প্রতীক’ বলে প্রশংসা করেছেন। সারদেশাই পদ্মশ্রী পুরস্কার ভারত এবং গোয়া সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে সারদেশাই বলেছেন, ‘পদ্মশ্রী খুব বড় বিস্ময়, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু, আনন্দদায়ক। আমি ভারত ও গোয়া সরকারের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এই গৌরব প্রত্যক্ষ করতে পেরে এবং জীবিত অবস্থায় এই সম্মানে সম্মানিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। এটি আমার দেশপ্রেমকে আরও বাড়িয়েছে এবং জীবনকে বাড়িয়েছে।’
তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৫ সালে সারদেশাই ভূগর্ভস্থ রেডিয়ো স্টেশন ‘ভোজ ডি লিবারডে’ চালু করেছিলেন। তার মাধ্যমে পর্তুগিজ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। ট্রান্সমিশন সেন্টার স্থাপনে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন। এমনকী স্বাধীনতার পরেও তিনি গোয়ার সেবা অব্যাহত রাখেন। গোয়ার আদালতে প্রথম মহিলা আইনজীবী হিসাবে তিনি সকলের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্মৃতি গতকালের মতো টাটকা রয়েছে সারদেশাইয়ের কাছে। তিনি জানান, গোয়ার মুক্তির সময় ১৯৬১ সালের ১৯ ডিসেম্বর একটি সামরিক বিমানে করে তিনি উড়ে বেড়াচ্ছিলেন। আর মুক্তির বিষয়টি গোয়াবাসীদের জানানোর জন্য লিফলেট বিলি করেছিলেন।
তিনি জানান, ১৯৫৪ সালে দাদরা এবং নগর হাভেলি পর্তুগিজদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়ার পরে একটি ভূগর্ভস্থ রেডিয়ো স্টেশন শুরু করার কথা ভেবেছিলেন। এরপর একটি দল গঠন করে সারদেশাই এবং তাঁর স্বামী বামন স্টেশনটি চালাতে শুরু করেন।
বামন পরে অ্যাঙ্গোলায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। তিনি পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছিলেন ১৯৯২ সালে। তিনি বলেছিলেন, তাদের সম্প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মনোবল বজায় রাখা, পর্তুগিজদের নিরাশ করা, পর্তুগিজদের মিথ্যার মোকাবিলা করা এবং দেখানো যে এটি কেবল গোয়া নিয়ে লড়াই নয় বরং অন্যান্য সমস্ত ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই।
জানা যায়, প্রথমে একটি জঙ্গল থেকে রেডিয়ো সম্প্রচার করা হয়। তবে পর্তুগিজরা শীঘ্রই সেই ঠিকানা জেনে ফেলে। ফলে সেখান থেকে পালিয়ে অন্য জায়গায় তাদের রেডিয়ো স্টেশন স্থাপন করতে হয়েছিল। এমন একটি জায়গায় তারা স্টেশন স্থাপন করেছিলেন যেখানে মানুষের বেঁচে থাকা খুব কঠিন ছিলাম সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড় এবং জোঁকে ভর্তি ছিল সেই জায়গা। সেখান থেকেই ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দম্পতি সম্প্রচার চালিয়েছিলেন। দিনে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করে দিনে দুবার দৈনিক সম্প্রচার চালিয়েছিলেন।পর্তুগিজরা সম্প্রচার বন্ধ করার জন্য ব্যাপকভাবে চেষ্টা করেছিল এবং ফ্রিকোয়েন্সি জ্যাম করেছিল। কিন্তু তাঁরা সহজেই সম্প্রচারের ফ্রিকোয়েন্সিতে সামান্য পরিবর্তন করে এটি মোকাবিলা করেছিলেন।