Lionel Messi Byju's: মুনাফার মুখ দেখার জন্য ২,৫০০ কর্মী ছাঁটাই। তাঁদের কাছে ক্ষমাও চাইলেন সিইও। তার পরেই লিওনেল মেসিকে সংস্থার মুখ বানানো হল। Byju's-এর ব্যবসা নীতি নিয়ে বিভ্রান্ত অনেকেই। লোকসানে ডুবে থাকা সংস্থা কীভাবে বিশ্বসেরা ফুটবলারের সঙ্গে হাত মেলায়? প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের।
এড-টেক সংস্থা বাইজুস-এর গ্লোবাল ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়েছে লিওনেল মেসি-কে। সংস্থার 'এডুকেশন ফর অল' উদ্যোগের মুখ করা হয়েছে তাঁকে। এর জন্য ঠিক তাঁর সঙ্গে কত টাকার চুক্তি হয়েছে, তা জানা যায়নি।
মানিকন্ট্রোল-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাইজুস সমাজসেবামূলক খাতে খরচ করতে পারে। মেসির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে লাইসেন্স এবং লার্নিং মেটেরিয়াল দিতে পারে সংস্থা।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ২০২০-২১ সালে বিপুল লোকসানের রিপোর্ট প্রকাশ করে বাইজুস। তারপরেই বাইজু-র বিনিয়োগকারীরা সংস্থার খরচে রাশ টানার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। FY21-তে মোট ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৫৮৯ কোটি টাকা।
প্রচারে ২,৫০০ কোটি!
ফাইলিং অনুযায়ী FY21-এ বিজ্ঞাপন এবং বিপণনের জন্য ২,৫০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হয়েছে। এগুলি তা-ও ফিফা বিশ্বকাপের অফিসিয়াল স্পন্সর হওয়ার আগে। ফিফা বিশ্বকাপের জন্য চুক্তিতে অভাবনীয় টাকা খরচ করছে সংস্থা। একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী বাইজুস এই স্পনসরশিপের জন্য প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করছে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা!
ক্রিকেট দলের জার্সিতে
এর আগে ২০১৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসর হিসাবে জায়গা করে নেয় বাইজুস। সম্প্রতি ৫৫ মিলিয়ন ডলারের(৪৫৩ কোটি টাকা) বিনিময়ে ফের সেই চুক্তি রিনিউ করে সংস্থা। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলছে, তারও অন্যতম প্রধান স্পনসর বাইজুস।
বাইজুসের বিজ্ঞাপনের অন্যতম প্রধান মুখ শাহরুখ খান। তাঁর সঙ্গেও যে কম টাকার চুক্তি নয়, তা বলাই বাহুল্য।
অধিগ্রহণ
আকাশ-এর মতো বড় টিউশন সংস্থা, Epic-এর মতো মার্কিন অনলাইন প্ল্যাটফর্মও অধিগ্রহণ করছে Byju's। সেখানেও খরচ কম নয়। এছাড়াও গ্রেট লার্নিং, টপার, গ্রেডআপ, হ্যাশলার্ন, স্কলার, হোয়াইট হ্যাট জুনিয়র, অসমোর মতো অনলাইনট প্ল্যাটফর্ম কিনতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে বাইজুস। পড়ুন: প্রায় ৭,৩০০ কোটি টাকায় আকাশ ইন্সিটিউট কিনে নিল Byju's
বাইজুসে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক কাজ করেন। এঁদের মধ্যে অনলাইনে জনপ্রিয় বহু শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের বিপুল অঙ্কের বেতন দেয় সংস্থা। ইঞ্জিনিয়ারিং, সেলস টিমে ফ্রেশারদেরও ৮-১০ লক্ষ টাকার বার্ষিক প্যাকেজ দিচ্ছে বাইজুস।
বাইজুসের সেলস টিমের উপর কোর্স বিক্রির তুমুল চাপ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে প্রাক্তন কর্মীদের অনেকেই Quora-র মতো প্ল্যাটফর্মে মুখ খুলেছেন। প্রাক্তন কর্মীদের একাংশের দাবি, অনলাইন কোর্স বিক্রির জন্য পড়ুয়াদের ফোন করে, বাড়ি গিয়ে চেষ্টা করতে হত তাঁদের। এদিকে সেই কোর্স অপছন্দ হওয়ায় টাকা ফেরত নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি লাভের মুখ দেখতে বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রায় ২,৫০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করেছে সংস্থা।
'অপ্রয়োজনীয়তা ও কাজের সদৃশতা এড়াতে এবং প্রযুক্তিকে আরও ভালভাবে ব্যবহার করে, BYJU's-এর ৫০,০০০ কর্মীর প্রায় পাঁচ শতাংশকে পর্যায়ক্রমে প্রোডাক্ট, কনটেন্ট, মিডিয়া এবং প্রযুক্তি দল থেকে ধাপে ধাপে 'রেশনালাইজড' করা হবে,' বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থা।
BYJU’S India বিজনেস সিইও মৃণাল মোহিত জানান, 'আমরা বিপুল আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্য স্থির করেছি। এই পদক্ষেপগুলি আমাদের ২০২৩ সালের মার্চের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে লাভজনক হয়ে উঠতে সহায়তা করবে।'
কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য ‘ক্ষমা’ চেয়ে ইমেলও লিখেছেন সংস্থার সিইও বাইজু রবীন্দ্রন। দ্রুত লাভজনক হয়ে ওঠার পর কর্মীদের ‘ফিরিয়ে আনা’র বিষয়টিই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন তিনি। পড়ুন: লাভের জন্য ২,৫০০ কর্মীকে ছাঁটাই! ইমেল করে ক্ষমা চাইলেন BYJU's-র সিইও
তবে কর্মীরাও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন। কর্মীদের ‘বিদ্রোহের’ মুখে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনায় কাটছাঁট করতে হয়েছে সংস্থাকে।
দেশের সবচেয়ে বেশি ভ্যালুয়েশনের(২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) স্টার্ট-আপের ভবিষ্যত কী হয়, এখন সেটাই দেখার। আগামিদিনে শেয়ার বাজারেও প্রবেশের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার।