২০৩০ সালের মধ্যে মদ খেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকাংশে বাড়তে পারে। সেই কারণে এবার এই পণ্যের বিজ্ঞাপনেও কড়াকড়ি নিয়ম আনতে চলেছে সরকার। ভারতে মদের সরাসরি বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তাই অনেক মদ উৎপাদনকারী কোম্পানি 'সারোগেট বিজ্ঞাপন' পদ্ধতি ব্যবহার করে। আর এবার এই সারোগেট বিজ্ঞাপন পদ্ধতিও নিষিদ্ধ করে দিতে চলেছে ভারত। মাদকের প্রচার যাতে আর না হয় সেই জন্যই সারোগেট বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার পরে যদি কোনও সংস্থা মাদকের জন্য সারোগেট বিজ্ঞাপন পদ্ধতি ব্যবহার করে তবে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।
সারোগেট বিজ্ঞাপন কী
সারোগেট হল একটি বিজ্ঞাপন পদ্ধতি, যা এমন কিছু পণ্যের প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা সরকারি প্রবিধানের অধীনে বিজ্ঞাপন থেকে নিষিদ্ধ বা সীমিত করা হয়েছে৷ যেমন, অনেক অ্যালকোহল নির্মাতা কোম্পানি সোডা বা জলের বোতলের বিজ্ঞাপন দেয় এবং সেগুলিতে সোডা এবং জলের ছবি থাকে, তবে নামটি থাকে ওই অ্যালকোহল ব্র্যান্ডের। এর অর্থ হল বিজ্ঞাপনে প্রত্যক্ষভাবে অ্যালকোহলের প্রচার না করা হলেও, এটি কিন্তু পরোক্ষভাবে মাদকের প্রচারের সঙ্গেই জড়িত।
যেমন, ব্রিউয়ার কার্লসবার্গ ভারতে তার টিউবর্গ পানীয় জলের প্রচার করে। কোম্পানিটির একটি বিজ্ঞাপনে ফিল্ম তারকাদের একটি ছাদে পার্টি করতে দেখা যায়। ব্যাকগাউন্ডে চলে 'টিল্ট ইয়োর ওয়ার্ল্ড' স্লোগান, যা পরোক্ষভাবে মনোযোগ ঘোরায় বিয়ারের দিকেই। বিজ্ঞাপনটির সঙ্গে এই বার্তাটি দেওয়া হয়, 'দায়িত্বের সঙ্গে পান করুন'।
পেরনোড একই পন্থা অবলম্বন করে। গ্লাস জাতীয় জিনিসপত্রের প্রচারের আড়ালে হুইস্কি ব্র্যান্ড প্রচার করে তারা। বিজ্ঞাপনে বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাটকে র্যাম্প হাঁটতে দেখা যায় এবং কন্ঠ ভেসে আসে, আমার জীবন, আমার গর্ব।
আরও পড়ুন: (Bangladesh Consulate in NY stormed: নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে তাণ্ডব বাংলাদেশিদের, সরানো হল মুজিবের ছবি)
সেলিব্রেটিরা এই বিজ্ঞাপনে কাজ করলে দিতে হবে জরিমানা
রয়টার্সের মতে, সারোগেট বিজ্ঞাপনের বিষয়ে সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা নিধি খারে বলেছেন, কোম্পানিগুলি তাদের ওষুধের পণ্যের প্রচারের জন্য যে কোনও উপায় অবলম্বন করতে পারে না। যদি কোনও সারোগেট বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে, তাহলে তাদের বড় জরিমানা দিতে হতে পারে। তিনি আরও বলেছিলেন যে নেশাজাতীয় পণ্যের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনে যদি কোনও সেলিব্রিটিদেরও দেখা যায়, তাহলে তাঁদেরও ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও দিতে হতে পারে।
ভারত বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম মদের বাজার
রিপোর্ট অনুসারে, পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যায় যে, ভারত হল বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম মদের বাজার, যার বার্ষিক আয় ৩.৮ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে মাথাপিছু অ্যালকোহলের বার্ষিক ব্যবহার প্রায় ৫ লিটার, যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৭ লিটার হতে পারে। এটি কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য বিষের সমতুল্য, কারণ এর ফলে সৃষ্ট গুরুতর রোগ মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। চিনের থেকে ভারতে মাদক খেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তাই এই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে, এক মাসের মধ্যে নতুন নিয়ম জারি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগেও অনেকবার সারোগেট বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এর আগে বেশ কয়েকবার সারোগেট বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে এই ধরনের প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর থেকে, অনেক এলকোহল কোম্পানি একই ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হওয়া 'এক্সটেনশন পণ্য'-এর ব্যবসার মাধ্যমে আইন লঙ্ঘনের উদ্ভাবনী উপায় অবলম্বন করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সিনিয়র সরকারি সূত্র জানিয়েছে, নতুন নিয়মগুলি কিছু অ্যালকোহল কোম্পানি, যেমন পেরনোড এবং কিছু ঘরোয়া মাদক সংস্থাকে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য সতর্ক করে। ভারত ব্র্যান্ড এক্সটেনশন বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে নয়। তবে সরকার চায় যে কোম্পানি তাদের যে পণ্যটির প্রচার করছে, তা সঠিকভাবে চিত্রিত করা হোক। বিজ্ঞাপনটি যে মদের ব্র্যান্ডের জন্য, ভোক্তাদের এমন ধারণা যাতে না দেওয়া হয়।