ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ডে কার্যকর হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। এরই সঙ্গে সেই রাজ্যে লিভ-ইন পার্টনারদের রেজিস্ট্রেশন করানো বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে। এদিকে নয়া আইন অনুযায়ী, নিয়ম না মানলে বা রেজিস্ট্রেশনে কোনও ভুল তথ্য দিলে জেলেও যেতে হতে পারে দোষীদের। আইনে এর সাজা হিসেবে তিন মাসের কারাবাস কিংবা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তিরই বিধান আছে। এদিকে নয়া অইনে আরও বলা হয়েছে, কেউ যদি লিভ-ইনের রেজিস্ট্রেশন করাতে এক মাসের বেশি দেরি করেন, তা হলে তিন মাসের জেল কিংবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। (আরও পড়ুন: বন্ধ নিজেদের অনুদান, তবুও ট্রাম্পকে 'ধন্যবাদ' জানাল বাংলাদেশ, ইউনুসের সরকার বলল…)
আরও পড়ুন: আগুন! আতঙ্কিত যাত্রীরা ছুটে নামলেন ট্রেন থেকে, ব্যাহত লোকাল পরিষেবা
প্রসঙ্গত, উত্তরাখণ্ডের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, লিভ-ইন সম্পর্ক এবং সম্পর্কিত বিষয়গুলি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করবে। এই আবহে নিয়মে বলা আরও হয়েছে, ২১ বছর বয়সির ছোট কেউ যদি লিভ-ইন সম্পর্কে থাকেন, তাহলে তাঁকে অভিভাবকের সম্মতি নিতে হবে এর জন্যে। অপরদিকে বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে সর্বনিম্ন বয়স থাকবে ২১ বছর। এদিকে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের রীতি-রেওয়াজ মেনে বিয়ে করতে পারবেন দম্পতি। তবে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হবে সেই ক্ষেত্রেও। (আরও পড়ুন: নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির গুরুদ্বারগুলিতে মার্কিনি অভিযান, কীসের খোঁজ চলছে?)
আরও পড়ুন: হাসিনা কন্যা পুতুল তো কানাডার নাগরিক, দাবি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের
এদিকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে বহুবিবাহ ও 'হালাল' নিষিদ্ধ হয়েছে। নয়া আইনে ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নারীর অধিকার পুরুষের সমান হবে। এবার থেকে ধর্মীয় বিধানের জোরে নারীর অধিকার খর্ব করা যাবে না। এছাড়া লিভ-ইন সম্পর্কে থাকাকালে সন্তান হলে সেই সন্তান বাবা ও মায়ের উত্তরাধিকার লাভ করবে। অপরদিকে নয়া আইনে বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষ একাধিক বিয়ে এবং একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে না। এদিকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আদিবাসীদের ক্ষেত্রে বলবৎ হবে না। জন্ম, বিয়ে, উত্তরাধিকার, নারীর অধিকারের মতো ক্ষেত্রে আদিবাসী সমাজের নিজস্ব বিধান চালু আছে। সেগুলি বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। (আরও পড়ুন: ভারতের থেকে ব্রহ্মোস কেনা প্রায় চূড়ান্ত ইন্দোনেশিয়ার? কত দাম পড়বে মিসাইলের)
বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের পরে ২০২২ সালের মার্চ মাসে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে ইউনিফর্ম সিভিল কোড সম্পর্কে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে ২০২২ সালের ২৭ মে ইউসিসির খসড়া তৈরির জন্য এই প্যানেল গঠন করা হয়েছিল। দেশাই কমিটি রাজ্যের বিভিন্ন অংশে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেড় বছর ধরে আলোচনার পরে চার খণ্ডে একটি বিস্তৃত খসড়া প্রস্তুত করে এবং তা সরকারের কাছে জমা দেয়। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সেই খসড়া রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং এর কয়েকদিন পরেই উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় ইউসিসি বিল পাস হয়। প্রাথমিক প্রস্তাবের প্রায় দু'বছর পর ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে সম্মতি দেন। (আরও পড়ুন: OpenAI-এর পর্দা ফাঁস করা বালাজির মৃত্যু ঘিরে ঘনীভূত রহস্য, সামনে এল ঘরের ছবি)
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্ক জুজুতে মথা নত, 'সব শর্ত মেনে' অবৈধ অভিবাসীদের ফেরাল কলম্বিয়া
এদিকে তারপর প্রাক্তন মুখ্যসচিব শত্রুঘ্ন সিংয়ের নেতৃত্বে আরও একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ শুরু করে এই নিয়ে। আইনটি বাস্তবায়নের জন্য বিধি-বিধান প্রণয়নের জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সিনহা কমিটি গত বছরের শেষের দিকে রাজ্য সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সেই বিধানগুলিতে অনুমোদন দিয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি তারিখ স্থির করার অনুমতি দিয়েছে। এই আবহে দেশের ৭৬ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের একদিন পরেই এই আইন কার্যকর করা হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি।