সোমবার থেকে দেশে শুরু হচ্ছে তৃতীয় দফার লকডাউন। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত তালাবন্ধের মেয়াদ থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে শিথিলতার পথে হেঁটেছে কেন্দ্র। জোনের নিরিখে সেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। একনজরে দেখে নিন আগামী ১৭ মে পর্যন্ত আপনার জীবন কেমন থাকবে -
শহরের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য যাতায়াত করতে পারবেন?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সবরকমের অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। অর্থাৎ উলটো দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই ধরনের যাতায়াত করা যাবে। তবে করোনার সংক্রমণ রুখতে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এলাকা-ভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষমতা দিয়েছে কেন্দ্র। সেই মোতাবেক নিজেদের প্রয়োজন মতো বিধিনিষেধ জারি করতে পারবে রাজ্যগুলি।
তাহলে সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হাঁটার জন্য বেরোতে পারবেন বা দৌড়ানোর জন্য যেতে পারবেন?
নিয়মানুযায়ী, হ্যাঁ, পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উপর নির্ভর করছে যে আপনি বেরোতে পারবেন কিনা।
অন্যের বাড়িতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কি যেতে পারবেন?
সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় কাজের অনুমতি রয়েছে। সেই নিয়মের আরও একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, অন্য কাজে বাড়িতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা যেতে পারবেন।
বন্ধুর বাড়িতে যেতে পারবেন?
সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় কাজের ছাড়পত্রের আরও একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বন্ধুর বাড়ি যেতে পারবেন। তবে তা অনেকাংশে নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নির্দেশিকার উপর। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে পৃথক একটি নির্দেশে যে কোনও ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে কেন্দ্র।
ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে পারবে?
অনুমোদিত ক্ষেত্র ছাড়া রেড বা লাল জোনে সবরকম গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। তবে সেক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট শর্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে। চার চাকার গাড়িতে চালক ছাড়া সর্বাধিক দু'জন যাত্রী থাকতে পারবেন। দু'চাকার ক্ষেত্রে একজনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অরেঞ্জ (কমলা) এবং গ্রিন (সবুজ) জোনে শুধুমাত্র অনুমোদিত ক্ষেত্রে চার চাকার গাড়িতে চালক ছাড়া সর্বাধিক দু'জন যাত্রী থাকতে পারবেন। দু'চাকার গাড়িতে পিলিয়ন রাইডিংয়ে (দু'জন থাকবে) অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র।
গণ পরিবহনের ক্ষেত্রে কী অবস্থা?
দেশের সর্বত্র যাত্রীবাহী ট্রেন ও মেট্রো পরিষেবা বন্ধ। লাল জোনে সাইকেল রিক্সা, অটো রিক্সা এবং বাস চলবে না। কমলা জোনে আন্তঃরাজ্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। জেলার মধ্যেও বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সবুজ জোনে বাস চলাচল করতে পারবে। তবে মোট যাত্রী সংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি থাকা চলবে না।
ট্যাক্সি ও অ্য়াপ ক্যাব কি চলবে?
লাল জোনে চলবে না। তবে কমলা জোনে ট্যাক্সি ও অ্যাপ ক্যাব রাস্তায় নামতে পারবে। গাড়িতে একজন চালক ও দু'জন যাত্রী থাকবেন। সবুজ জোনেও একই শর্তে ট্যাক্সি ও অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা চালানোর অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র।
শপিং মল, রেস্তোরাঁ কি খোলা থাকবে?
না। দেশের সর্বত্র শপিং মল, রেস্তোরাঁ, পানশালা, জিম, সিনেমা হল, সুইমিং মিল বন্ধ থাকবে।
কোন কোন দোকান খুলবে?
শহরাঞ্চল অর্থাৎ পুর ও পুরনিগম এলাকায় বাজারের দোকান ও শপিং মল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাজারের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখা যাবে। পাড়া, আবাসনের সব দোকান খোলা রাখা যাবে। অত্যাবশ্যকীয় বা অনাবশ্যকীয় যে কোনও পণ্যের ক্ষেত্রেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। সবক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলতে হবে। তবে শপিং মলের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন দোকান খোলা যাবে। অর্থাৎ শপিং মল খোলা যাবে না।
অনলাইনে কি শপিং করা যাবে?
কমলা ও সবুজ জোনে এলাকাগুলিতে সবরকমের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারবে ই-কমার্স সংস্থাগুলি। তবে লাল জোনে সেরকম কোনও শিথিলতার পথে হাঁটেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অনলাইনে শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের অর্ডার দিতে পারবেন সেখানকার বাসিন্দারা।
সেলুনে যেতে পারবেন?
কমলা ও সবুজ জোনে সেলুন খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে লাল জোনে তা বন্ধ থাকবে।
রেড জোনে থাকলে অফিস যাওয়া যাবে?
লাল জোনে ৩৩ শতাংশ কর্মী নিয়ে বেসরকারি অফিসে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। বাকি কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করবেন।
সরকারি অফিসে ১০০ শতাংশ ডেপুটি সেক্রেটারি ও তাঁর থেকে উঁচু পদের আধিকারিকরা কাজ করতে পারবেন। প্রয়োজন অনুসারে বাকি কর্মীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ অফিসে আসবেন।
তবে কোনওরকম নিষেধাজ্ঞা ছাড়া প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পুলিশ, কারাগার, হোমগার্ড, সিভিল ডিফেন্স, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা ও সম্পর্কিত কাজ, এনআইসি, শুল্ক বিভাগ, এফসিআই, এনসিসি, এনওয়াইকে ও পুর পরিষেবা চালু থাকবে। জনগণকে পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় কর্মী মোতায়েন করতে হবে।
মদ ও তামাক জাতীয় দ্রব্যে কি ছাড় আছে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, তিনটি জোনেই মদের দোকান খোলা থাকবে। শুধুমাত্র আলাদা দোকানগুলি খোলা যাবে। অর্থাৎ শপিং মলে মদের দোকান বন্ধ রাখতে হবে। যে দোকানগুলিতে মদ বিক্রি হবে, সেখানে দু'জনের মধ্যে কমপক্ষে ছ'ফুটে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি থাকতে অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে জনসমক্ষে মদ, পান, গুটখা ও তামাকজাতীয় দ্রব্য খাওয়া যাবে না।
‘কনটেনমেন্ট জোন’ বা সংক্রামক এলাকায় অবশ্য কোনওটাই মিলবে না।
‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপ কি সবার জন্য বাধ্যতামূলক?
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। কর্মীদের মধ্যে সেই অ্যাপের ১০০ শতাংশ কভারেজ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানের উপর। ‘কনটেনমেন্ট জোন’ বা সংক্রামক এলাকায় বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে এই অ্যাপের ১০০ শতাংশ কভারেজ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শহরে নির্মাণ কাজ কি করা যাবে?
শুধুমাত্র সিটু নির্মাণ (যেখানে নির্মাণকাজের জায়গাতেই শ্রমিক পাওয়া যায়, বাইরে থেকে আনতে হয় না) এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পের নির্মাণকাজে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের নির্দেশিকায় কমলা বা সবুজ জোনে কোনও বিধিনিষেধ নিয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
শিল্প, কলকারখানার কাজ কি চলবে?
শুধুমাত্র বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সিইজেড) ও রফতানিজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পগুলিকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রিতভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ও টাউনশিপগুলিও সচল থাকতে পারবে। ফার্মাকিউটিক্যালস, মেডিক্যাল ডিভাইস ও সেগুলির কাঁচামাল-সহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তৈরির কারখানা চালু থাকবে।
যে কারখানাগুলির সর্বদা প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয় ও সেগুলির জোগান নিশ্চিত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির হার্ডওয়্যার উৎপাদন কারখানা চালু রাখা যাবে। পাট শিল্প চালু রাখা যাবে। তবে বিভিন্ন শিফট থাকবে ও সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে চলতে হবে। প্যাকেজিং সামগ্রীর উৎপাদনেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।
গ্রামীণ এলাকায় সব কলকারখানার কাজে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশিকায় কমলা বা সবুজ জোনেও কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।