স্টিভেন স্পিলবার্গের দ্য টার্মিনাল ছবিটার কথা মনে আছে? ভিক্টর নাভরোস্কির চরিত্রে অভিনয় করা টম হ্যাঙ্কস নয় মাস কাটিয়েছিলেন বিমানবন্দরের মধ্যে। সিনেমা নয় এবার বাস্তবেও হচ্ছে সেরকম। অন্য কোনও দেশে নয়, খোদ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। লকডাউনের জেরে দিল্লি বিমানবন্দরের ট্রান্সিট এলাকায় গত ৫৪দিন ধরে বসে আছেন এক জার্মান নাগরিক। বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হলে তবেই তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন!
হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৮ মার্চ হানোই থেকে ইস্তানবুল যাচ্ছিলেন এডগার জিবার্ট। কিন্তু সেদিনই তুরস্ক অবধি সব ফ্লাইট বাতিল করে ভারত করোনার জেরে। চারদিন বাদে সম্পূর্ণ বিমান পরিষেবা বন্ধ করা হয় ও ২৫ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয় যেটা এখনও চলছে।
একই সময় এডগারের মতো অন্য কিছু যাত্রীও আটকে পড়েছিলেন। কিন্তু এডগারের আবার ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে, যেই কারণে তাঁর সমস্যা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। জার্মানি এম্ব্যাসি তাঁর কাস্টডি নিতে চায়নি। অন্যদিকে অপরাধের পূর্ব রেকর্ড থাকায় ভারতেও ভিসা পাবে না সে।
মার্চের ১৮ তারিখ ভিয়েতনাম থেকে দিল্লিতে নামে সে। কিন্তু তারপরে সে দেখতে পায় তুরস্কে যাওয়ার সব পথ বন্ধ। এডগার প্রায় সাতদিন ট্রান্সিটে থাকার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু জার্মান দূতাবাস জানায় যে এডগার একজন দাগি আসামি ও তাঁর বিরুদ্ধে বহু মামলা দায়ের করা আছে। বিদেশের মাটিতে থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করেনি জার্মান দূতাবাস।
এরপর এই ঘটনার কথা জানানো হয় দিল্লি পুলিশকে। ভারতের ভিসার জন্য সরকারিভাবে আবেদন না করলেও তাঁর অপরাধী কার্যকলাপের জন্য ভিসা মেলার কোনও সম্ভাবনাই নেই কার্যত। তাই ওই ট্রান্সিট জোনেই থাকতে হচ্ছে জার্মান নাগরিককে।
লাগেজ নিয়ে ওখানেই থাকছেন তিনি। পত্রপত্রিকা পড়ছেন, ফোনে কথাবার্তা বলছেন ও এখনও কিছু যে খাবারের দোকান খোলা আছে, সেগুলি থেকে খাচ্ছেন। বিমানবন্দরে যারা কাজ করেন, তাদের সঙ্গে গল্পগুজবও করেন তিনি। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাঁকে একটা সোফা, মশারি, টুথপেস্ট ও কিছু অত্যাবশ্যক সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
তাঁর টাকা পয়সার কোনও অভাব নেই। ফাঁকা ট্রান্সিট এরিয়ায় যেখানে পাচ্ছে ঘুমিয়ে যাচ্ছে সে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এয়ারপোর্টের পদস্থ আধিকারিকরা এই তথ্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বলেন যে মাঝে মাঝে গিয়েই জার্মান নাগরিকের সঙ্গে তাঁরা কথা বলে আসেন, তিনি কেমন আছেন জানতে, তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কিনা, সেটির খোঁজ নিতে। এই জন্য সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক ভাবে তিনি সুস্থ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এডগার বলেছে তাঁর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিলে তিনি টিকিট কেটে নেবেন। বিভিন্ন দেশের ভিসা আছে তাঁর কাছে। কিন্তু আপাতত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল শুরু হলেই তিনি যেতে পারবেন বলে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছে। তবে কবে প্লেন চালু হবে, তাও আবার বিদেশের জন্য সেটা কেউ জানে না।আপাতত বন্দে ভারত মিশনের আওতায় বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া ভারতীয়রা দেশে ফিরছেন।
গত সপ্তাহে তুরস্কের আনকারায় যাবে, তেমন একটি ফ্লাইটে এডগারকে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই দেশ রাজি হয়নি কারণ বিমানটি ছিল শুধু নাগরিক ও যাদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি আছে তাদের জন্য।