গাজিপুর সীমান্তে কনভয় আটকান হল লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং তাঁর বোন তথা কংগ্রেসের সদ্য নির্বাচিত সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার। তাঁরা দু'জনেই উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে যাচ্ছিল আজ। তবে তাঁদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি। এই আবহে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রাহুল গান্ধী। রাহুলের অভিযোগ, হিংসা কবলিত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে পুলিশ তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে। রাহুল দাবি করেন, তিনি বিনা কনভয়তেই সম্ভলে যেতে প্রস্তুত। তবে তাও পুলিশ তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। তাঁকে কয়েকদিন পরে সেখানে যেতে বলেছে পুলিশ। এদিকে এই আবহে গাজিপুরের রাস্তায় বিশাল যানজট তৈরি হয়েছে। (আরও পড়ুন: 'ভারত-বাংলাদেশ গোপন চুক্তি প্রকাশ করা হোক', এবার নয়া দাবি উঠল ওপারে)
আরও পড়ুন: সাক্ষী ১০০-র ওপর, আরজি কর ধর্ষণ-খুন মামলায় চার্জশিট পেশ হবে সন্দীপ-অভিজিতের নামে
রাহুল বলেন, 'আমরা সম্ভলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। তবে পুলিশ আমাদের অনুমতি দিচ্ছে না। সংসদের বিরোধী দলনেতা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। কিন্তু তাঁরা আমাকে বারণ করছে। আমি সেখানে একা যেতেও রাজি। পুলিশ আমার সঙ্গে যাক সেখানে। তবে পুলিশ সেই কথাও শুনছে না। পুলিশ বলছে, আমরা কয়েকদিন পরে এলে সেখানে যেতে দেবেন। তবে বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমার অধিকার এতে খর্ব হচ্ছে। আমার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। আমরা শুধু সম্ভলে গিয়ে দেখতে চাই সেখানে কী হচ্ছে। কিন্তু এটাই নয়া ভারত। এই ভারতে সংবিধানকে শেষ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা লড়াই জারি রাখব।' (আরও পড়ুন: শপথ বৃহস্পতিতে, অবশেষে চূড়ান্ত হল নাম, মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন…)
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে। সেখানে এই গোটা পরিস্থিতির নেপথ্যে আছে এক মসজিদ। এই আবহে সম্ভলে 'বহিরাগতদের' প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আজ সম্ভলে যাওয়ার চেষ্টা করেন রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। এর আগেই অবশ্য সম্ভলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজেন্দ্র পেনসিয়া বুলন্দশহর, আমরোহা, গাজিয়াবাদ এবং গৌতম বুদ্ধ নগর সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন যাতে রাহুল গান্ধীকে তাঁদের জেলা সীমান্তেই থামিয়ে দেওয়া হয়। যাতে তিনি আর সম্ভলে প্রবেশ করতে না পারেন। এই আবহে গৌতম বুদ্ধ নগর ও গাজিয়াবাদের পুলিশ কমিশনারদের পাশাপাশি আমরোহা ও বুলন্দশহরের পুলিশ সুপারদের চিঠি দিয়েছেন সম্ভলের জেলাশাসক। আর সেই মতো পুলিশ গাজিপুরে আটকে দেয় রাহুলকে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের সম্ভল এলাকায় নতুন করে শাহি জামা মসজিদের সমীক্ষার কাজ শুরু করা হয়। আদালতের নির্দেশেই মুঘল জমানার এই মসজিদে সমীক্ষা চালানো হচ্ছিল। এই আবহে রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ এলাকায় পৌঁছে যান সমীক্ষক দলের সদস্যরা। সেই দলে ছিলেন জেলাশাসক রাজেন্দ্র পানসিয়া, পুলিশ সুপার কৃষ্ণ বিষ্ণোই, মহকুমাশাসক বন্দনা মিশ্রা, সার্কেল অফিসার অনুজ চৌধুরী এবং তহসিলদার রবি সোনকর। সমীক্ষা চলাকালীন যাতে কোনও অশান্তি না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশের বিরাট বাহিনী এবং ব়্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও মোতায়েন করা হয়েছিল সেখানে।
তবে পুলিশ নিয়ে সমীক্ষকরা সেই এলাকায় পৌঁছতেই উত্তেজনাছড়িয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ। আর মুহূর্তে হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছুড়তে শুরু করে স্থানীয়রা। একের পর এক গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। সেই সময় হামলাকারীদের কেউ কেউ গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। আজ পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন বন্দুকে ব্যবহৃত আলাদা আলাদা বুলেটের শেল উদ্ধার হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। এদিকে সংঘর্ষে মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় একটি আদালতের নির্দেশ অনুসারে সম্ভলের ওই মসজিদে সমীক্ষার কাজ শুরু করা হয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর কেলা দেবী মন্দির কমিটির তরফ থেকে চনদৌসির একটি আদালতে মামলা রুজু করা হয়। মামলাকারীদের দাবি, সম্ভলের শাহি জামা মসদিজ আসলে শ্রী হরিনাথ মন্দির। যা সম্রাট বাবরের শাসনকালে, ১৫২৯ সালে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এই আবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিচারক আদিত্য সিং ওই দিনই মসজিদের ভিডিয়োগ্রাফি সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো সমীক্ষা হয় সেই মসজিদে।