থর মরুভূমির মাঝে ১৭২ হাজার বছরের প্রাচীন লুপ্ত নদীর হদিশ পেলেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি, একদা এই নদীর তীর ধরেই ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল আদিম মানুষ।
সম্প্রতি কোয়াটার্নারি সায়েন্স রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জানা গিয়েছে, থর মরুভূমির মধ্য ভাগে নল গ্রামের কাছে এক খাদানে অবলুপ্ত সেই নদীর একাধিক চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদলে ছিলেন জার্মানির দ্য ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য সায়েন্স অফ হিউম্যান হিস্ট্রি, তামিল নাডুর আন্না বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইআইএসইআর কলকাতার বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, প্রস্তরযুগে থর মরুভূমি অঞ্চলের চরিত্র একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির ছিল।
রাজস্থানের বিকানেরে সেই আদিম নদীখাতের কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এই খাদান থেকে কাছাকাছি বর্তমান নদীর দূরত্ব ২০০ কিমিরও বেশি। গবেষকরা জানিয়েছেন, একদা যেখানে বয়ে যেত ঘাঘরা-হাকরা নদী, আজ সেখানেই রয়েছে বিস্তীর্ণ শুকনো মরুভূমি অঞ্চল। নদীখাত সরে যাওয়ার ফলেই এই প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটেছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
গবেষকরা মনে করছেন, এ যাবৎ থর মরুভূমির মধ্যে দিয়ে কোনও নদীর বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে খতিয়ে দেখা হয়নি। তাঁদের মতে, এই নদীপথ ধরেই অতীতে একাধিক প্রজাতির পরিযোজন ঘটেছিল।
শউপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষম করে তাঁরা দেখেছেন, এক সময় থর মরুভূমির উপর দিয়ে বেশ কিছু নদীখাত বয়ে গিয়েছিল। তবে ঠিক কোন সময়ে এই অঞ্চল নদীমাত্রিক ছিল, তা এখনও সঠিক নির্ণয় করা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেমা অচ্যুথানের মতে, সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে হলে মরুভূমির মধ্যভাগে খনন প্রয়োজন। তবে ইতিমধ্যে অবলুপ্ত নদীর বালি ও পাথরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে মাটির নীচে। নদীর স্রোতে বয়ে আসা সেই পলি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন গবেষকরা। প্রাথমিক অনুসন্ধান বলছে, নদীর বয়ে আনা কোয়ার্টজ পাথরের কুচি প্রায় ১৭২ ও ১৪০ হাজার বছর আগে সেখানে জমা হয়েছিল।
অনুসন্ধানে আরও জানা গিয়েছে যে, ৯৫ থেকে ৭৮ হাজার বছর আগেও স্রোতস্বীনী ছিল এই নদী। এর পরেই নদীখাত শুকিয়ে যেতে থাকে। তবে ২৬,০০০ বছর আগে ফের একবার নদীর মরা খাতে স্রোত ফিরেছিল, সে প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, যে সময় থর মরুভূমির এই অঞ্চলে নদী সবচেয়ে সক্রিয় ছিল, সেই সময় সেখানে ন্যূনতম বৃষ্টিপাত হত, জানিয়েছেন গবেষকরা। তবে এই নদীতীর বরাবর প্রাচীনকালে যে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে খাদানের অতলে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এই নদী সক্রিয় থাকার সময়ের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে ইতিহাসের আদিপর্বের অন্য এক ঘটনা। জানা গিয়েছে, সেই সময়েই আফ্রিকা ভূখণ্ড থেকে থর পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল আদিমতম মানুষ। এ পথেই ক্রমে তারা ছড়িয়ে পড়েছিল দক্ষিণ এশিয়ায়।