জনসংখ্যার নিরিখে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাসের নামে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি যে আসলে নিজেদের ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থাই পাকা করতে চাইছে, এই অভিযোগ আগেও উঠেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, এই পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আসলে গোবলয় বা হিন্দিবলয়ের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে দেশের অন্যান্য অংশের আসন কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। যাতে গোবলয়ের ভোটের নিরিখে তারাই চিরকাল ক্ষমতায় থেকে যেতে পারে।
অঙ্কের হিসাব বলছে, ২০২৬ সালে যদি সত্যিই লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ ভারতের আসনসংখ্যা তথা প্রতিনিধিত্ব কমবে এবং মারাত্মক হারে বেড়ে যাবে গোবলয়ের আসনসংখ্য়া ও প্রতিনিধিত্ব। এই পরিকল্পনাকে তাই 'যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর নির্মম আঘাত' বলে উল্লেখ করেছেন দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন।
এই ইস্যুতে সরব তিনি আগেই হয়েছিলেন। আর এবার এই ইস্যুকে সামনে রেখেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কার্যত সম্মুখ সমরে নামার ইঙ্গিত দিলেন তিনি। পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সাতটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে।
চিঠি প্রাপকদের সেই তালিকায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন - কেরালার পিনারাই বিজয়ন, কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া, তেলঙ্গনার রেবন্ত রেড্ডি, অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু, পঞ্জাবের ভগবন্ত মান এবং ওডিশার মোহন মাঝি। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এঁদের মধ্যে চন্দ্রবাবু নাইডু বর্তমানে কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শরিক। আর ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী তো বিজেপি সরকারেরই প্রশাসনিক প্রধান!
বিষয়টি নিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডেলেও সরব হয়েছেন স্ট্যালিন। তাঁর বক্তব্য খুবই সোজাসাপটা। আধুনিক সমাজ, শিক্ষার অগ্রগতি ও সুপ্রশাসনের স্বার্থে একটা সময় সারা দেশেই জনসংখ্য়া নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।
দক্ষিণ ভারত-সহ ভারতের অন্যান্য অংশের কিছু রাজ্য এক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু, গোবলয় কখনও এসবের ধার ধারেনি। এই প্রেক্ষাপটে যদি লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়, তাহলে সেই দায়িত্বশীল রাজ্যগুলির প্রতিই অবিচার করা হবে। কারণ, সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে।
এই 'অবিচার' যাতে কিছুতেই না হয়, তার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়-সহ সাতটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, স্ট্যালিনের যুক্তি মোটেই অগ্রাহ্য করার মতো নয়। কারণ, আসন পুনর্বিন্য়াসের বিষয়টি সংবিধান স্বীকৃত হলেও তাতে যাতে পক্ষপাত না থাকে, তাও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
এটা খুব স্বাভাবিক যে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, বিহার, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের লোকসভার আসন বাড়বে। কিন্তু, সেটা ন্যায্য হবে না। কারণ, দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে যখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজন ছিল, তখন এই রাজ্যগুলি সেই দায়িত্ব পালন করেনি। অথচ, তাদের জন্য সুকৌশলে লোকসভার আসনসংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে জনসংখ্যা এবং জনঘনত্বের বৈষম্যের জন্য ইন্দিরা গান্ধী এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার দুই দফায় এই আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি স্থগিত করে দিয়েছিল। কিন্তু, মোদী সরকার সে পথে হাঁটবে না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।