কর্নাটক, মহারাষ্ট্র নাকি মধ্যপ্রদেশ - ক্ষমতা দখলের নাটকে কোন রাজ্য এগিয়ে থাকবে, তা নিয়ে ছোটোখাটো বিতর্ক চলতেই পারে। বিশেষত সোমবার যেভাবে একের পর এক নাটকীয় মুহূর্তের সাক্ষী থাকল মধ্যপ্রদেশ, তাতে মহারাষ্ট্র-কর্নাটক পর্বকেও টেক্কা দিতে পারে হিন্দি বলয়ের রাজ্যটি।
তবে সেই নাটকীয় মোচড় একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডনের নির্দেশের পরও সোমবার আস্থাভোট হবে কিনা, তা খোলসা করে বলেলনি স্পিকার এনপি প্রজাপতি। বরং করোনাভাইরাসকে ঢাল করে আস্থাভোট আটাকানোর কৌশল নিয়েছিলেন কমল নাথরা। একেবারে সেই ছকেই এগোলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন : মধ্যপ্রদেশ সংকট: 'আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যা আছে', দাবি টলমল কংগ্রেসের
সোমবার বাজেট অধিবেশের শুরুতে ভাষণ দেন রাজ্যপাল। মেরেকেটে এক মিনিটের ভাষণে গণতান্ত্রিক পথে এগোনোর পরামর্শ দেন। তাঁর ভাষণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই করোনা প্রসঙ্গ তোলেন পরিষদীয় মন্ত্রী গোবিন্দ সিং। একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনায় তিনি জানান, ইতিমধ্যে মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এই পরিস্থিতিতে কেরালা, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থান বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। এরপর করোনা পরিস্থিতির জেরে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার।
তারপর যে বিরোধী বেঞ্চ থেকে হই হট্টগোল শুরু হবে, তা ভালোভাবেই জানতেন বর্ষীয়ান প্রজাপতি। উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা। আস্থাভোটের দাবিতে অনড় থাকেন বিরোধীরা। রাজ্যপালের নির্দেশ মতো আজই আস্থাভোট করার আর্জি জানান বিরোধী দলনেতা গোপাল ভার্গব, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ও প্রাক্তন মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র। তার প্রেক্ষিতে স্পিকার বলেন, 'যা আলোচনা হয়েছে আপনাদের সঙ্গে রাজ্যপালের। স্পিকারের সঙ্গে হয়নি।'
আরও পড়ুন : ছত্তিশগড়েও জ্যোতিরাদিত্যরা রয়েছেন, বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে শুরু জল্পনা
উত্তরটা যেন আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলেন স্পিকার। তবে আগেভাগে তৈরি ছিল বিজেপিও। তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টে যায় বিজেপি। দ্রুত আস্থাভোটের আর্জি জানায় গেরুয়া শিবির। তারপরই রাজভবনে ছোটেন শিবরাজ-সহ ১০৬ জন বিজেপি বিধায়ক। রাজ্যপালের কাছে দ্রুত আস্থা ভোটের আর্জি জানান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে আশ্বস্ত করে রাজ্যপাল বলেন, 'উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আপনাদের অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।'
সেই আশ্বাসের কয়েক ঘণ্টা পর মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যপাল নির্দেশ দেন, ১৭ মার্চ আস্থা ভোট করতে হবে। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন, আস্থাভোট যদি না হয়, তাহলে কমল নাথের সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বলে বিবেচিত হবে। এদিকে, মঙ্গলবারই বিজেপির আর্জি শুনবে সুপ্রিম কোর্ট। সেজন্য বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তের বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : মধ্যপ্রদেশ সংকট : সিন্ধিয়াকে নিন্দা গেহলটের, এবার জল্পনায় রাজস্থান
রাজ্যপালের সেই নির্দেশের পর কংগ্রেস থেকেও পালটা কটাক্ষ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী পিসি শর্মা বলেন, 'রাজ্যপালের চিঠিটা বিস্ময়কর।' তীর যে কোনদিকে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারোর। যদিও শিবরাজের দাবি, কোনওকিছুই করে সরকারে টিকে থাকতে পারবে না কংগ্রেস। তাঁর কথায়, 'এই অস্থির সরকারকে করোনাভাইরাসও বাঁচাতে পারবে না।'
শেষপর্যন্ত করোনাভাইরাস ঢালেই কংগ্রেস সরকার ধরে রাখবে নাকি মধ্যপ্রদেশে 'কমল' ফুটবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে মঙ্গলবার।