কর্মক্ষেত্রে যৌন নিগ্রহের সংজ্ঞার পরিসর আরও বিস্তৃত ও স্পষ্ট করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। একটি মামলার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষেণ - কর্মক্ষেত্রে যদি কারও সঙ্গে 'অযাচিত বা অনভিপ্রেত' (আনওয়েলকাম) কোনও আচরণ করা হয়, তাহলে সেটাও যৌন নিগ্রহের মধ্যেই পড়বে।
এই প্রসঙ্গে বিচারপতি এন মঞ্জুলা বলেন, 'যদি কর্মক্ষেত্রে কারও সঙ্গে অনভিপ্রেত ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা যৌন হেনস্থা বলেই ধরা হবে। সেক্ষেত্রে কী কারণে ওইরকম আচরণ করা হচ্ছে, তা বিচার্য নয়।...'
বিচারপতি আরও বলেন, 'যদি কোনও কিছু ভালোভাবে গ্রহণ না করা হয়, এবং তা যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় ও অপর লিঙ্গের ব্যক্তির যদি সেই আচরণ অনভিপ্রেত মনে হয়, এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিরা হলেন মহিলা, তাহলে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে তা যৌন হেনস্থার সংজ্ঞার অধীনে পড়বে।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের রায় উদ্ধৃত করে একথা বলেন বিচারপতি এন মঞ্জুলা। তিনি স্পষ্ট করেন, পশ আইন অনুসারে, কী কারণে যৌন হেনস্থা করা হল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যৌন হেনস্থা করা হয়েছে, এটাই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, একটি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষ বা সহকর্মীরা যখন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, কথা বলবেন, তখন তাঁরা পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম ও ভিত্তি।
একজন কর্মী হয়তো ভাবছেন, অপর লিঙ্গের সহকর্মীর প্রতি তাঁর আচরণ খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, এক্ষেত্রে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, অপর লিঙ্গের সহকর্মী তাঁর এই আচরণে কী অনুভব করছেন, সেটা।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুরুষটির কাছে কোন বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত, তাতে কিছু যায় আসে না। বরং, মহিলাটির কাছে কোন বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এইচসিএল টেকনোলজিস নামে একটি সংস্থার অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি) তাদের কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ করেছিল। যা পরবর্তীতে শ্রম আদালতে খারিজ হয়ে যায়। মাদ্রাজ হাইকোর্টে উলটে শ্রম আদালতের সেই সংক্রান্ত নির্দেশ ও রায় খারিজ করে দেয়।
ওই সংস্থার নিচুতলার কয়েকজন মহিলা কর্মীর অভিযোগ ছিল, এক সিনিয়র পুরুষ আধিকারিক তাঁদের নানাভাবে বিরক্ত ও হেনস্থা করতেন। মহিলা কর্মীরা যখন কাজে ব্যস্ত, সেই সময় তিনি পিছন থেকে এসে তাঁদের গা-ঘেঁষে দাঁড়াতেন, তাঁদের কাঁধে হাত দিতেন অথবা তাঁদের করমর্দন করতে বাধ্য করতেন।
কিন্তু, অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য ছিল, তিনি মোটেও কোনও মহিলা সহকর্মীকে যৌন হেনস্থা করার উদ্দেশ্য নিয়ে এমন আচরণ করেননি। তিনি আসলে খুব কাছ থেকে তাঁদের কাজ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করছিলেন। যদিও উচ্চ আদালত তাঁর এই যুক্তি মানেনি।