ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন কোনও খেলোয়াড়ের মৃত্যু হলেই সংশ্লিষ্ট সহ-খেলোয়াড় বা ম্যাচের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করা যায় না। যদি তাঁরা খুনের উদ্দেশ্যে কোনও কিছু করেন, একমাত্র তাহলেই তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি)-এর ৩০৪ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
২০২০ সালের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে রুজু হওয়া মামলায় এই রায় দিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট মামলায় খুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর-ও খারিজ করে দেওয়া হল।
সংশ্লিষ্ট মামলা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর স্থানীয় একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই প্রাণ যায় এক খেলোয়াড়ের। ঘটনাটি ঘটে তামিলনাড়ুর পুল্লরমবক্কর থানা এলাকায়।
ওই দিন স্থানীয় দু'টি ক্লাবের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হয়। সেই ম্যাচ চলাকালীন বুকে বল লেগে মৃত্যু হয় ডি লোগানাথন নামে এক যুবকের। তিনি ওই ম্যাচে খেলছিলেন এবং তৃতীয় বর্ষের আইনের ছাত্র ছিলেন।
সেই ঘটনার পর ওই ম্যাচের দুই আয়োজক আর রাসু এবং পি আইয়াপ্পানের বিরুদ্ধে আইপিসি-র ৩০৪ নম্বর ধারা অনুসারে খুনের অভিযোগে এফআইআর করা হয়। সেই এফআইআর খারিজ করার দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন অভিযুক্তরা।
অভিযুক্তদের বক্তব্য ছিল, কাউকে খুন করা ওই ম্যাচ আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল না। উপরন্তু, যখন খেলার মাঝেই বুকে বল লেগে মৃত্যু হয় ওই যুবকের, সেই ঘটনায় সরাসরি আয়োজনকদের কোনও হাত ছিল না। বস্তুত, এই ঘটনা মর্মান্তিক হলেও কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করেননি বা করতে চাননি।
মামলাকারীদের এই যুক্তি মেনে নিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। বিচারপতি জি জয়চন্দ্রণের এজলাসে এই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ হল, 'ম্যাচের আয়োজকরা কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যাটার - কেউই ইচ্ছাকৃতভাবে লোগানাথকে খুন করতে বা কোনওভাবে তাঁকে আঘাত করতে চাননি।'
এই কারণেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় খুনের মামলা রুজু করা যায় না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে আদালত। এবং সেই একই কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআর-ও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট ম্যাচে কর্ক বল দিয়ে ক্রিকেট খেলা হচ্ছিল। মৃতের পরিবারের দাবি ছিল, ওই বল ব্যবহার করার জন্য লোগানাথনের মৃত্যু হয়েছে। এবং এর জন্য খেলার আয়োজকদের দায়ী করা হয়েছিল।
এক্ষেত্রে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ভারতের এই অংশে কর্ক বল দিয়ে ক্রিকেট খেলা নতুন কিছু নয়। এই ব্যবস্থা এখানে প্রচলিত। তাছাড়া, ভারতে কর্ক বলে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধও নয়। তাই এই যুক্তিতেও আয়োজকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা যায় না।
সেইসঙ্গে, বিচারপতি আরও উল্লেখ করেন, আইপিসি-এর ৮৭ নম্বর ধারা অনুসারে, যদি বিনোদনের জন্য কোনও খেলার আয়োজন করা হয়, এবং সেই খেলা চলাকালীন কারও মৃত্যু হয়, ও সেই মৃত্যুর নেপথ্যে কোনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘটনাক্রম না থাকে, তাহলে সেই ঘটনা কোনও অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না।
এদিকে, এই মামলায় প্রয়াত লোগানাথনের বাবা দামোধরণ তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কারণ, লোগানাথন ছিলেন তাঁর একমাত্র ছেলে। তাই, তাঁর অবর্তমানে পরিবারটিকে চরম অর্থসঙ্কটে পড়তে হবে বলেও যুক্তি পেশ করা হয়।
এই আবেদনের ভিত্তিতে আদালত জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দেয়। কোনও প্রকল্পের অধীনে প্রয়াত ছাত্রের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা দেখতে বলা হয়।
একইসঙ্গে, এই নির্দিষ্ট বিষয়টিতে জেলাশাসকের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব পেশ করতে বলা হয়। আগামী দু'মাসের মধ্যে তাঁকে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হবে।