বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > 'সন্তান পালন মূল কাজ', মহিলাদের নিয়ে মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মনোভাব তুলনায় নেতিবাচক: রিপোর্ট

'সন্তান পালন মূল কাজ', মহিলাদের নিয়ে মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মনোভাব তুলনায় নেতিবাচক: রিপোর্ট

'সন্তান পালন মূল কাজ', মহিলাদের নিয়ে মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মনোভাব তুলনায় নেতিবাচক: রিপোর্ট। (ছবিটি প্রতীকী, সৌজন্যে এএফপি)

UNESCO report on Madrasa: ইউনেস্কোর রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই মাদ্রাসার পাঠ্য়ক্রমে লিঙ্গ সাম্যের অভাব দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের মতো মুসলিম-প্রধান দেশের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রাচীন ধ্যান-ধারণার নিরিখে লিঙ্গভিত্তিক কাজের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

মহিলাদের উচ্চশিক্ষা, কর্মরত মায়েদের নিয়ে প্রগতিশীল চিন্তাধারা কিছুটা কম মাদ্রাসার পড়ুয়াদের। এমনটাই উঠে এল ইউনেস্কোর একটি রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণরা মনে করেন যে সন্তানের দেখভাল করাই হল স্ত্রী'দের প্রাথমিক কাজ।

ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ার যে সব দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি, কয়েক দশক আগে সেখানে শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য অনেক বেশি ছিল। মাদ্রাসার মতো ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মাদ্রাসায় মেয়েদের নথিভুক্তিকরণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্ষণশীল গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি পালটেছে। যে এলাকায় স্বল্পমূল্যের শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে মাদ্রাসা উঠে এসেছে। তবে লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে মাদ্রাসার যে ইতিবাচক প্রভাব আছে, তা কমিয়ে দিয়েছে মহিলাদের প্রতি মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণদের দৃষ্টিভঙ্গি।

কীরকম সেই দৃষ্টিভঙ্গি?

প্রথমত, ইউনেস্কোর রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই মাদ্রাসার পাঠ্য়ক্রমে লিঙ্গ সাম্যের অভাব দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের মতো মুসলিম-প্রধান দেশের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রাচীন ধ্যান-ধারণার নিরিখে লিঙ্গভিত্তিক কাজের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত, ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুযায়ী, সামাজিক ভাব আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে যে লিঙ্গ-ভিত্তিক বিধিনিষেধ দেখা যায়, তাতে পড়ুয়াদের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি হতে পারে। যা মহিলাদের উচ্চশিক্ষা এবং কর্মরত মায়েদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণার বীজ বপন করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণ হিসেবে ইউনেস্কোর রিপোর্টে শিক্ষকদের মনোভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, লিঙ্গ বৈষম্য দূরবীকরণের ক্ষেত্রে যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে, তা সম্ভবত মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে নেই। তাই তাঁরা নেতিবাচক 'রোল মডেল' হয়ে ওঠেন।

চতুর্থত, ইউনেস্কোর রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে আধুনিক চিন্তাসম্পন্ন 'রোল মডেল'-দের সেরকম সান্নিধ্য পায় না মাদ্রাসার পড়ুয়ারা। সেখানে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মনোভাবাপন্ন (লিঙ্গ বৈষম্য) যে শিক্ষা প্রদান করা হয়, তাতে পড়ুয়াদের মানসিকতা পরিবর্তন হয় না। বরং তাঁদের মনেও সেই চিরাচরিত পিতৃতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা তৈরি হয়।

মহিলাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি

ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুযায়ী, মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল এবং মাদ্রাসার মধ্যে তুলনায় দেখা গিয়েছে যে মহিলাদের উচ্চশিক্ষা এবং কর্মরত মায়েদের নিয়ে মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব বেশি। মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণরা মনে করেন, শিশুদের বড় করাই হল স্ত্রী'দের প্রাথমিক দায়িত্ব। তাঁদের বিশ্বাস, কতজন সন্তান হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। সেইসঙ্গে বড় পরিবারের প্রতি অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত মিলেছে। 

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মাদ্রাসার পড়ুয়াদের নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষ স্কুলের পড়ুয়াদের তুলনায় মহিলাদের নিয়ে তাঁদের মনোভাব তুলনামূলক কম ইতিবাচক। বিশেষত স্বীকৃতিহীন মাদ্রাসার ক্ষেত্রে সেটা বেশি। মাদ্রাসার শিক্ষকদের পরিবারও যথেষ্ট বড় বলে দেখা গিয়েছে।’

তবে ইউনেসকোর রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে, মাদ্রাসার মতো এরকম ধর্মীয় স্কুলের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবকে যেন অতিরঞ্জিত না করা হয়। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে মাদ্রাসার মতো ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের প্রভাব থেকে সামাজিক বিশ্বাস এবং আর্থ-সামাজিক পরিবেশকে পৃথক করা অত্যন্ত কঠিন। মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের নথিভুক্তিকরণে পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাসে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে দেখা গিয়েছে।

বন্ধ করুন