ট্রেনে সওয়ার এক চা বিক্রেতা এবং দুই যাত্রীর চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্যই নাকি ঘটে গিয়েছে জলগাঁওয়ের ভয়াবহ ও মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার এমনটাই দাবি করেছেন এনসিপি নেতা তথা মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার।
তিনি জানিয়েছেন, স্রেফ 'গুজবে' কান দিয়েই প্রাণ হারাতে হয়েছে ১৩ জন রেলযাত্রীকে। যাঁরা 'ট্রেনে লাগা আগুনের' হাত থেকে বাঁচতে আগুপিছু না ভেবেই ট্রেন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরেছিলেন! মন্ত্রীর দাবি, ভুয়ো অগ্নিকাণ্ডের এই গুজব প্রথম ছড়িয়েছিলেন লখনউ-মুম্বই পুষ্পক এক্সপ্রেসে সওয়ার এক চা বিক্রেতা!
অজিত জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধে নাগাদ এই গুজব শুনেই মুহূর্তে ট্রেনের যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং তার ফলেই তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ট্রেন থেকে ঝাঁপ মারেন। তার আগে চেন টেনে ট্রেন থামান ওই যাত্রীরা। কিন্তু, ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামার সময় তাঁরা গিয়ে পড়েন পাশের রেললাইনে।
যে লাইন দিয়ে ঠিক সেই সময়েই বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লিগামী কর্ণাটক এক্সপ্রেস ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসছিল। প্রাণ বাঁচাতে লাইনে ঝাঁপ মারা যাত্রীরা সেই ট্রেনের চাকায় কার্যত গণহারে কাটা পড়েন। যে ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন।
পুণে শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অজিত পাওয়ার জানান, 'প্যান্ট্রি থেকে একজন চা বিক্রেতা হঠাৎই ট্রেনে আগুন লেগেছে বলে চিৎকার করে উঠেছিলেন।'
মন্ত্রীর দাবি, সেই চিৎকার দুই যাত্রীর কানে যায়। তাঁরা উত্তরপ্রদেশের শ্রাবস্তীর বাসিন্দা। তাঁরাই বাকি যাত্রীদের এই 'খবর' দেন। এবং তার ফলেই মুহূর্তে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যার অন্তিম পরিণতি হয় মর্মান্তিক ও ভয়াবহ।
অজিত পাওয়ার সাংবাদিকদের আরও বলেন, সেই সময় ট্রেন দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। যাত্রীরা চেন টানার পর চালক ব্রেক কষেন। কিন্তু, আতঙ্কিত যাত্রীদের একাংশ এরপর আর অপেক্ষা করেননি। ট্রেনের গতি কমার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরাও আশপাশ কিছু না দেখে ট্রেন থেকে ঝাঁপ মারতে শুরু করেন।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই দুর্ঘটনা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে একাধিক যাত্রীর দেহ এমনভাবে ট্রেনের চাকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে যে তাঁদের ঠিকমতো চেনার পর্যন্ত উপায় ছিল না। এখনও পর্যন্ত যে ১৩ জনের এই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে শনাক্ত করা গেলেও বাকি তিনজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
যে দুই যাত্রী চা বিক্রেতার 'আগুন আগুন' চিৎকার শুনে বাকি যাত্রীদের সেই ভুয়ো খবর দিয়েছিলেন, এই দুর্ঘটনায় তাঁরাও জখম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অজিত পাওয়ার।