সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। সেই বিরাট কর্মযজ্ঞের দিনক্ষণও ঘোষিত হয়ে গিয়েছে। ঠিক এমনই একটি সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থানগুলিকে 'মুখ্যমন্ত্রী তীর্থ দর্শন যোজনা'র অন্তর্ভুক্ত করল মহারাষ্ট্র সরকার।
ফলত, খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোটের আগে সংখ্যালঘুদের মন পেতেই এমন পদক্ষেপ করতে হল মহারাষ্ট্রের মহাযুতি সরকারকে?
রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, মুম্বই শহরে এবং তার আশপাশে যতগুলি জনপ্রিয় দরগা রয়েছে, সেগুলিকে এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এই তালিকায় রয়েছে - মুম্বইয়ের হাজি আলি দরগা, কল্যাণের হাজি মালাঙ দরগা এবং ভিওয়াণ্ডির দিওয়ানশাহ দরগা।
তবে, কেবলমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থানগুলিই নয়, সেইসঙ্গে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনাস্থলগুলিও স্থান পেয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারি যোজনার অধীনে। যার মধ্যে অন্যতম - পার্সিদের বিভিন্ন পবিত্র স্থান, বৌদ্ধ মন্দির এবং জৈন সম্প্রদায়ের উপাসনাস্থলগুলি।
এই যোজনার অধীনস্ত ধর্মীয় স্থানগুলিতে যদি এমন কোনও প্রবীণ নাগরিক তীর্থ করতে আসেন, যাঁর পরিবারের বার্ষিক রোজগার আড়াই লক্ষ টাকা বা তার থেকে কম, তাহলে সেই প্রবীণ নাগরিককে ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেয় রাজ্য সরকার।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে গত ১৫ অক্টোবর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। তাতে মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত ৯৫টি পবিত্র স্থান এবং রাজ্যের বাইরের আরও ১৫টি তীর্থস্থানকে এই যোজনার আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভিওয়াণ্ডির (পূর্ব) বিধায়ক তথা সপা নেতা রইস শেখ। যদিও একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হল, সরকারের এই উদ্যোগ যত না সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় গৃহীত হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি ভোটের কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রইস শেখ বলেন, 'গত জুলাই মাসে যখন এই যোজনা শুরু করা হয়েছিল, তখনই আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম। আমার প্রশ্ন ছিল, কেন মহারাষ্ট্রের একটিও মুসলিম ধর্মস্থান এই যোজনার অধীনে জায়গা পায়নি? ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থানগুলিকেও যাতে এই যোজনার অধীনে নিয়ে আসা হয়, সেই দাবি তুলে আমি মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে চিঠিও লিখেছিলাম।'
রইস শেখের আরও বক্তব্য, যেভাবে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, একেবারে শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থানগুলিকে এই যোজনার অন্তর্ভুক্ত করা হল, তাতেই বর্তমান রাজ্য সরকারের মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সপা বিধায়ক বলেন, 'মহারাষ্ট্র সন্তদের মাটি। এই রাজ্যে সুফি সন্তদের অসংখ্য দরগা রয়েছে। হিন্দুরাও সেখানে প্রার্থনা করতে যান। এখানে হাজি মালাঙ এবং হাজি আলির মতো দরগা রয়েছে। এই ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার তাদের যোজনার প্রথম তালিকায় এই স্থানগুলি অন্তর্ভুক্ত করেনি। এতেই তাদের স্বরূপ সামনে চলে এসেছে।'