বাংলাদেশের কেয়ারটেকার সরকারের সঙ্গে কি গণতন্ত্রকামী নাগরিকদের একাংশের সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে? এই প্রশ্ন উঠছেই। কারণ, মঙ্গলবার (১১ মার্চ, ২০২৫) একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ঘিরে প্রতিবাদী ও পুলিশের মধ্য়ে রীতিমতো সংঘর্ষ বেধে যায়। যার জেরে পরবর্তীতে আমজনতার উদ্দেশে, বিশেষ করে যাঁরা সেই সমস্ত প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করছেন, যার মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসনের উদ্দেশে এক বা একাধিক প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেইসব প্রতিবাদীদের উদ্দেশ করে পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করা বার্তা দিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে করা ওই পোস্টের একেবারে শুরুতেই মাহফুজ লিখেছেন, 'পুলিশকে সহযোগিতা করুন' এবং 'এখন দরকার স্থিতিশীলতা'!
মাহফুজের আরও দাবি, ‘গত কয়েকদিন পুলিশই নারীবিদ্বেষী ও ধর্ষণের মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করেছে। পুলিশ অ্যাক্টিভ হয়েছে বলেই বনানীর ছিনতাইয়ের হামলার আসামিদের গ্রেফতার করা গেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে আছেন। কিন্তু, তাঁরাও পুলিশ ছাড়া একা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারবেন না। পুলিশ পুরোপুরি অ্যাক্টিভ না হলে নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়ে যায়।’
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই যে বাংলাদেশে নারী নির্যাতন লাগাতার বাড়ছে, সেকথা প্রথমে অস্বীকার করলেও এখন আর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া যাচ্ছে না। নাগরিক সমাজ এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। রাজনীতিকরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। যার জেরে একপ্রকার বাধ্য হয়েই মহম্মদ ইউনুসকেও ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলি মানতে হয়েছে।
এই অরাজকতার প্রতিবাদেই মঙ্গলবার 'ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠন প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৯ দফা দাবিপত্র বা স্মারকলিপি জমা দেওয়া। কিন্তু, পুলিশের বাধার মুখে সবকিছু ভণ্ডুল হয়ে যায়। এবং দুই পক্ষের সংঘর্ষে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ঢাকার শাহবাগ মোড় সংলগ্ন এলাকা।
এরপরই মঙ্গলবার রাতে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টটি করেন মাহফুজ। তাতে কখনও তিনি প্রতিবাদীদের 'মব' (উন্মত্ত জনতা) বলে উল্লেখ করেন। আবার কখনও তাঁদের 'কমরেডস' সম্বোধন করেন!
তিনি লেখেন, 'মনে রাখবেন - Justice Hurried, Justice Burried! যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে মবের বিচারের মানসিকতা আমাদের পরিত্যাগ করা উচিত। অভ্যুত্থানের সরকারবিরোধী হঠকারী স্লোগান বাদ দিয়ে কার্যকর রূপরেখা নিয়ে সব পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়া উচিত। (তাহলেই) সমাধান সম্ভব।'
সবশেষে তাঁর লেখায় কিছুটা শ্লেষের সুরও দেখা যায়। তাঁর লেখা অনুসারে - 'সরকারবিরোধিতা কোন ফ্যাশন স্টেইটমেন্ট না, কমরেডস! গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেওয়ার আহবান রইল। সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ও আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান খুঁজতে হবে৷'
বুধবার রাত পর্যন্ত মাহফুজের এই পোস্ট ২০ হাজারেরও বেশি 'রিঅ্য়াকশন' পড়েছে। কিছু ইউজার মন্তব্যও করেছেন। তাঁদের মধ্য়ে কেউ কেউ আবার পালটা যুক্তি খাড়া করেছেন।