ভারতের বিচারব্যবস্থা কতটা স্বাধীন? ভারতের সংবাদমাধ্যমই বা কতটা পক্ষপাতহীন? লোকসভায় নিজের বক্তব্য পেশ করার সময় এই প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে এক বিচারপতির সরকারি বাসভবনের আউট হাউস থেকে বান্ডিল বান্ডিল পোড়া নোট উদ্ধার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনা প্রসঙ্গেই এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন মহুয়া।
লোকসভায় নিজের বক্তব্য পেশের সময় এই প্রসঙ্গে অতীতের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন মহুয়া। একইসঙ্গে দেশের বিচারব্যবস্থাকে প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন মহুয়া মৈত্র।
মহুয়ার বক্তব্য, তাঁর নিজের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে, এই ইস্যুতে বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা এবং তার পরবর্তী ঘটনাক্রম উল্লেখ করেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, 'আমরা সুশান্ত সিং রাজপুত মামলা দেখেছি। একটা আত্মহত্যার ঘটনা এবং তারপর এক নিরপরাধ তরুণীকে কীভাবে গোদি মিডিয়া হেনস্থা করেছে, আমরা তা দেখেছি।'
মহুয়া সরাসরি অভিযোগ করেছেন, গোদি মিডিয়া আসলে যেকোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে একটা ন্যারেটিভ তৈরি করে দিচ্ছে। এবং বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে (কেন্দ্রীয়) সরকারের পক্ষে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
মহুয়া উল্লেখ করেছেন, বিচারপতি যশবন্ত বর্মার সরকারি বাসভবনের আউট হাউস থেকে পুড়ে যাওয়া নোট উদ্ধারের ঘটনা সামনে আসার পর আপাতত তাঁকে বিচার প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে। কিন্তু, গোদি মিডিয়া এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিশেষ ধরনের উপস্থাপনা করছে।
সেটা কেমন? মহুয়ার মতে, 'গোদি মিডিয়া এখন মেতে উঠেছে বিচারপতিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এবং কীভাবে বিচারপতিদের নিয়োগের উপর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।'
মহুয়ার মতে, বিচারব্যবস্থাকে নিয়ে বিতর্ক কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং, এটা সরকারের দখলদারি করার মানসিকতার একটি বৃহত্তর প্রবণতার অংশ। মহুয়ার অভিযোগ, ইতিমধ্যেই নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারি আধিপত্য কায়েম হয়েছে।
মহুয়া মনে করছেন, বিচারপতি যশবন্ত বর্মার ঘটনাটিকে শিখণ্ডী করে আসলে সংবাদমাধ্যমের একাংশ এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে, যাতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কলেজিয়াম ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ উঠিয়ে দেওয়া যায় এবং তার বদলে 'ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্ট কমিশন' (এনজেএসি)-র মতো কিছু একটা ব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনা যায়।
এই ঘটনায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে মহুয়া বলেন, 'এই সভায় যাঁর নাম উল্লেখ করা যাবে না, যিনি পার্শ্ববর্তী সভার সভাপতিত্ব করেন, তিনি ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন কীভাবে সরকারের বর্তমান কলেজিয়াম ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেওয়া উচিত।'