গতকালই নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী ঐক্যের 'টর্নেডো'র বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি রাজ্যপাল ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'রাজ্যপালের বিজেপির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে'। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার অধ্যাদেশ নিয়েও মমতা বলেছিলেন, 'অধ্যাদেশ আনাই যায়'। এই সব উল্লেখযোগ্য মন্তব্যের পরই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের সঙ্গে রাজ্যপাল ইস্যুতে ফোনালাপ হয়েছে মমতার। সেই কথা টুইট করে জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী নিজে। উল্লেখ্য, বাংলার মতো তামিলনাড়ুতেও রাজ্যপাল নিয়ে ' সমস্যায়' ভুগছে সরকার। বিল পাশ করিয়ে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হলেও তা সই করছেন না তিনি। এই আবহে সম্প্রতি তামিলনাড়ু বিধানসভায় একটি রেজোলিউশন পাশ করানো হয়। তাতে বলা হয়, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্যপাল সম্মতি দেন।
এদিকে তামিলনাড়ু বিধানসভায় রাজ্যপাল সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাশ করানোর পর দেশের সকল অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন স্ট্যালিন। চিঠি আসে মমতার কাছেও। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, তারাও যেন বিল পাশের ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে সময় বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাবনা পাশ করান। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অঙ্গুলিহেলনে রাজ্যপালরা অগণতান্ত্রিক ভাবে কাজ করছেন এবং প্রশাসনিক কাজেও বাধা সৃষ্টি করছেন। এই আবহে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের আলোচনার প্রস্তাবও দিয়েছেন স্ট্যালিন। সেই নিয়েই গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কথা হয় স্ট্যালিনের। এই নিয়ে টুইট করে স্ট্যালিন লেখেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আমরা অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের রাজ্যপালদের অগণতান্ত্রিক কাজকর্মের বিরোধিতায় যে উদ্যেোগ নিয়েছি, তিনি তার প্রশংসা করেছেন। তিনি আমাদের পদক্ষেপকে সমর্থনও জানিয়েছেন। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করার জন্য বিরোধী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক বসার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।'
প্রসঙ্গত, অনলাইন গেমিং সংক্রান্ত একটি বিল সম্প্রতি পাশ করানো হয়েছিল তামিলনাড়ু বিধানসভায়। তবে দীর্ঘদিন সেই বিল ফেলে রেখেও তাতে সই করেননি সেরাজ্যের রাজ্যপাল। এই ধরনের সমস্যায় একাধিকবার পড়তে হয়েছে বাংলার সরকারকেও। বালি পুরসভা বিল থেকে শুরু করে একাধিক বিল রাজভবনে পড়ে থেকেছিল দীর্ঘদিন। তখন অবশ্য রাজ্যপালের আসনে জগদীপ ধনখড়। নতুন রাজ্যপাল হিসেবে সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে গোড়াতে মধুর সম্পর্ক থাকলেও ধীরে ধীরে তা তিক্ততার দিকেই এগোচ্ছে ফের। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজ্যপালের অতি সক্রিয়তা ভালো চোখে দেখছে না রাজ্য সরকার। যেভাবে রাজ্যপাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন, তাতে ফের মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার ভাবনাচিন্তা করছে সরকার। আর তার জন্য প্রয়োজনে অধ্যাদেশও আনা হতে পারে বলে গতকালই ইঙ্গিত দেন মমতা। রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এবং কেরলের পিনারাই বিজয়নেরও সরকার। এই আবহে রাজ্যপাল ইস্যুতে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা একজোট হতে চাইছেন।