বাংলার 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার'-এর ধাঁচেই ছত্তিশগড়ে বিবাহিতা মহিলাদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছে সেরাজ্যের বিজেপি শাসিত সরকার। সেই প্রকল্পের নাম 'মাহতারি বন্দন যোজনা'।
হঠাৎই জানা যায়, সেই প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকায় রয়েছেন নাকি এক সেলেব! তিনি কে জানেন? তিনি হলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল 'সানি লিওন'!
আজ্ঞে হ্যাঁ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, মাহতারি বন্দন যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে সানি লিওনের! তাঁর নামে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টও রয়েছে ছত্তিশগড়ে। এবং সেই অ্য়াকাউন্টে প্রতি মাসে যোজনার অধীনে ১,০০০ টাকা করে ভাতাও জমা করা হচ্ছিল সরকারের তরফে!
বিষয়টা তাহলে ভেঙেই বলা যাক। আসলে এই 'সানি লিওনি' আসল নন, ভুয়ো। সূত্রের দাবি, সরকারি প্রকল্পের টাকা নিজের পকেটে ঢোকাতে একজন পুরুষ ওই ভুয়ো অ্য়াকাউন্ট খুলেছিলেন! সেই অ্য়াকাউন্ট খোলা হয়েছিল সানি লিওনের নামে। বলা বাহুল্য, এর সঙ্গে ওই অভিনেত্রীর কোনও সম্পর্ক নেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে কীর্তিমান এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাঁর নাম বীরেন্দ্র জোশি। তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। পুলিশের বক্তব্য, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ সমস্ত পদক্ষেপ করা হবে।
একইসঙ্গে, যে সরকারি আধিকারিকরা এই অ্যাকাউন্টের ভেরিফিকেশন করার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, যদি দেখা যায়, এই ঘটনায় ওই সরকারি আধিকারিকদের কোনও 'অবদান' রয়েছে, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার অঞ্চলের তালুর গ্রামে এই প্রতারণার ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনা নজরে আসতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয়েছিল জেলা প্রশাসনের। পরে অবশ্য পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
জেলাশাসক হরিশ এস এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগকে। তাদের বলা হয়েছে, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি নেপথ্যে কোনও চক্র রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। যাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এত বড় কাণ্ড ঘটল, তাদের সকলকে চিহ্নিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
পাশাপাশি, এখনও পর্যন্ত ওই ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টে যত টাকা জমা পড়েছে, তাও যাতে সরকারের ঘরে ফেরানো যায়, সেই উদ্যোগ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্য়েই সংশ্লিষ্ট অ্য়াকাউন্টটি 'সিজড' করেছে প্রশাসন।
এদিকে, এই ঘটনা সামনে আসতেই রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। শাসক বিজেপিকে তুলোধনা করতে শুরু করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি দীপক বাইজির অভিযোগ, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তাঁর দাবি, মাহতারি বন্দন যোজনা-এ মোট যত উপভোক্তা রয়েছেন, তাঁদের অর্ধেকই নাকি ভুয়ো!
এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য়ের উপমুখ্যমন্ত্রী অরুণ সাউ। তাঁর বক্তব্য, আসলে মহিলারা হাতে টাকা পাচ্ছেন, তাঁদের ক্ষমতায়ন ঘটছে, এটা নাকি কংগ্রেসের সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা রাজ্য সরকারি এই প্রকল্পের সমালোচনা করছে। কারণ, তাদের সরকার যখন ছিল, তখন তারা মহিলাদের জন্য এমন কোনও প্রকল্প চালু করতে পারেনি।