বারো বছর বয়স থেকে ওদের দেখভালে নিযুক্ত রয়েছেন। ওদের ছাড়া তাঁর জীবন বৃথা। তাই নিজের অর্ধেক সম্পত্তি দুই হাতি মোতি ও রানির নামে উইল করে দিলেন মাহুত আখতার ইমাম (৫০)।
ইচ্ছাপত্রে বিবাহ বিচ্ছিন্না স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও বোনের নামে অর্ধেক ব্যক্তিগত সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন ইমাম। কিন্তু বাকি অর্ধেক দুই প্রিয় সঙ্গীকেই তিনি দিয়ে যেতে চান। তাদের মৃত্যুর পরে সেই অর্থ যাবে এশিয়ান ইস্ট এশিয়ান এলিফ্যান্ট রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ অ্যানিম্যাল ট্রাস্ট-এর (ঐরাবত) তহবিলে। ট্রাস্টের সাত জন সদস্য রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও উত্তরাখণ্ডে থাকেন। ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা তথা চেয়ারম্যান স্বয়ং ইমাম।
তিন পুরুষ ধরে হাতির দেখাশোনায় লেগে রয়েছে ইমামের পরিবার। ঠাকুরদা ও বাবার কাছে তালিম নিয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সেই মাহুত হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর সেই সময় থেকেই মোতি ও রানির সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
সেই সখ্যতা গাঢ়তর হয় ৮-৯ বছর আগে তারা তাঁর জীবন রক্ষা করার পরে। সেই রাতে বন্দুক হাতে ইমামের ঘরে হানা দিয়েছিল লুঠেরারা। কিন্তু ঠিক সময় প্রাণপণ ডেকে উঠে মাহুতকে সতর্ক করে দেয় দুই হাতি। ঘুম ভেঙে চেঁচামেচি জুড়লে ভয় পেয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।
প্রিয় দুই গজরাজের জন্য নালন্দা থেকে বিশেষ জুতোও বানিয়ে এনেছেন ইমাম। কখনও পায়ে পেরেক বা কাঁটা ফুটলে চলাফেরায় যন্ত্রণা শুরু হয় বলে এই ব্যবস্থা। প্রতি জোড়া জুতোর খরচ পড়েছে ১২,০০০ টাকা। এমনকি তাদের কথা ভেবেই বহু দিন হল আমিশ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন ইমাম।
হাতিদের প্রতি এই বাড়াবাড়ি প্রীতি দেখে বিরক্ত স্ত্রী সম্পর্ক ছেঁটে দিয়েছেন কয়েক বছর হল। খোঁজখবর নেয় না সন্তানরাও। তার মধ্যে ছেলে বিগড়ে গিয়ে অপরাধীদের খাতায় নাম লিখিয়েছে, জানেন ইমাম। সে-ও না কি তক্কে তক্কে রয়েছে বাবাকে খুন করে সম্পত্তি হাতানোর জন্য। ভয় নয় তার জন্য আফশোস ছাড়া আর কিছু নেই ইমামের মনে।
বছর দুয়েক আগে বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করেছিল সুপুত্র। তার জেরে কয়েক দিন হাজতবাসও করতে হয়েছিল ইমামকে। শেষমেষ অবশ্য মামলা টেকেনি বলে ছাড়া পান প্রৌঢ়। বাড়ি ফেরামাত্র তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান দুই দোস্ত।
পড়াশোনা কত দূর করেছেন? প্রশ্ন করলে ইমাম বলেন, ‘হাতি ও মানুষের বন্ধুত্ব অক্ষয় রাখার সমস্ত শিক্ষাই সম্পূর্ণ করেছি।’