উত্তরাখণ্ডের তেহরি গাড়োয়াল জেলায় একটি লেপার্ড বা চিতাবাঘকে গুলি করে মারা হল। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। স্থানীয় বন বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকদের দাবি, ওই চিতাবাঘটি 'নরখাদক'-এ পরিণত হয়েছিল! সেই জন্যই সেটিকে গুলি করে মেরে দেওয়া হয়।
বন দফতরের তরফে আরও জানানো হয়েছে, গত ২২ জুলাই ভিলাঙ্গানা ব্লকের ভাউড় গ্রামে ৯ বছরের একটি বালিকার মৃত্যু হয়। বনাধিকারিকদের দাবি, ওই বালিকাকে সংশ্লিষ্ট চিতাবাঘটিই মেরেছিল।
এই ঘটনার পরই প্রাণীটিকে 'নরখাদক' বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয় এবং সেটিকে মারার জন্য পেশাদার শুটারদের সাহায্য চাওয়া হয়।
এরপরও গত ২৯ সেপ্টেম্বর একই ব্লকের পুরওয়াল গ্রামে ৩ বছরের একটি শিশু (ছেলে) ওই চিতাবাঘের শিকার হয় বলে দাবি বন দফতরের। তারও পরে গত ১৯ অক্টোবর ১৩ বছরের এক কিশোরীকে চিতাবাঘটি মারে। ঘটনাটি ঘটে একই ব্লকের কোট মাহের গ্রামে।
এরপর স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় শিশু-কিশোরদের প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে সংশ্লিষ্ট তিন গ্রামের প্রাথমিক স্কুল ও হাইস্কুলগুলি তিনদিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন তেহারির জেলাশাসক ময়ূর দীক্ষিত। এমনকী, চিতাবাঘের আতঙ্কে এই স্কুলগুলিতে হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষা পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হয়।
বন দফতরের দাবি, যে চিতাবাঘটি ওই এলাকায় একের পর হামলা চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ, এবং যেটিকে ইতিমধ্যেই গুলি করে মারা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী চিতাবাঘ। প্রাণীটির বয়স আনুমানিক ৭ বছর।
ভিলাঙ্গানার রেঞ্জ অফিসার আশিস নওটিয়াল জানিয়েছেন, 'আমাদের শুটাররা সাফল্যের সঙ্গেই ওই নরখাদক চিতাবাঘটিকে মারতে সক্ষম হয়েছেন। গত চার মাসে ওই প্রাণীটি তিনটি শিশুকে মেরেছিল। এটি একটি ৭ বছর বয়সী স্ত্রী চিতাবাঘ ছিল। গত কয়েক মাস ধরেই এই এলাকার গ্রামগুলির বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন। আমাদের আধিকারিকরা চিতাবাঘটির দেহ দাহ করবেন। তার আগে সেটির ময়নাতদন্ত করা হবে।'
প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তেহরি জেলার মালেথা এলাকায় চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, সেই চিতাবাঘটি পাঁচজন স্থানীয় মহিলা এবং বন দফতরের চারজন কর্মীর উপর হামলা চালিয়েছে। পরে বন দফতরের ব্যবস্থাপনায় সেই চিতাবাঘটিকেও গুলি করে মারা হয়।
এরপর গত এপ্রিল মাসে করবেট ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকার অন্তর্গত মনোরথপুর বাসিতীলা গ্রামে ৩৫ বছরের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। অভিযোগ ছিল, এক বাঘিনীর শিকার হয়েছেন তিনি। ১০ দিন ধরে লাগাতার চেষ্টা করার পর সেই বাঘিনীকে বন্দি করা হয়।
এরপর গত সেপ্টেম্বর মাসে বন দফতরের কর্মীরা আরও একটি চিতাবাঘকে ফাঁদ পেতে ধরেন। অভিযোগ ছিল, সেই প্রাণীটি গত ১৯ অগস্ট পারুই জেলার কোটা গ্রামে ৫ বছরের এক বালককে মেরে ফেলেছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বনাধিকারিকদের নির্দেশ দেন, এই এলাকায় যাতে চিতাবাঘ ও বাঘের হামলা থেকে আমজনতাকে রক্ষা করা যায়, তা নিশ্চিত করতে তাঁরা যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।