নতুন করে হিংসা দেখা দিল উত্তরপূর্বের মণিপুর রাজ্যে। এর জেরে দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এলেন সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এবং তাঁর মন্ত্রিসভার চারজন সদস্য। ইতিমধ্যেই মণিপুরের হিংসায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। তবে বিগত কয়েকদিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছিল। তবে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে দেখা দিয়েছে হিংসা। এদিকে এই হিংসার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। মণিপুরের হিংসার আগের থেকেই এন বীরেন সিংকে গদিচ্যুত করার দাবি করে আসছিলেন বিজেপির একাংশ। তবে বীরেন সিং রাজ্যের অন্যতম বড় মৈতেই নেতা। পাশাপাশি তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা পরীক্ষিত। এই আবহে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী করবে সে নিয়ে রয়েছে জল্পনা। এদিকে গতরাত ৮টার সময় শাহের সঙ্গে বীরেনের বৈঠকে কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই জাতিগত হিংসার সাক্ষী থেকেছে মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে। তবে নতুন করে হিংসা দেখা দিয়েছে সেই রাজ্যে। বর্তমানে ভারতীয় সেনা এবং অসম রাইফেলসের কয়েক হাজার সেনা জওয়ান মোতায়েন রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৪৬ হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকেই অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এদিকে হিংসায় এখও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭০ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ইম্ফল পূর্ব এবং পশ্চিম জেলাগুলি বিক্ষিপ্তভাবে হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এই আবহে সেরাজ্যের ২ মন্ত্রী সহ ১০ জন কুকি বিধায়ক আলাদা রাজ্য এবং আলাদা প্রশাসনের দাবিতে সরব হয়েছেন।
জানা গিয়েছে, গত শনিবার মধ্যরাতে কিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুর সীমান্তে। এদিকে বিষ্ণুপুর থেকে একজনর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই সেখানে বিএসএফ জওয়ানদের মোতায়েন করা হয় পরিস্থিতি নিয়্ন্ত্রণে আনতে। সরকারি ভাবে জানা গিয়েছে, এই মাসের শুরু থেকে যে হিংসার সূচনা হয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত মোট ১৮০৯টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়েছে। এদিকে শনিবার রাতেই একটি পৃথক ঘটনায় কাংপোকপি জেলায় দু'টি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ইম্ফাল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতেই জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছে যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছে স্থানীয় আদিবাসীরা। এই আবহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল বুধবার। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই আবহে গত মাসে এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে আদিবাসী বনাম মৈতেইদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও।